"এমএসএন"-বার্সার ইতিহাসে নতুন মোড় এনে দেওয়া ত্রয়ী
MSN ত্রয়ী   ছবিঃ flickr

লিওনেল মেসি ক্যাম্প ন্যু তে ছিলেন। সে তো বার্সার কাতালোনীয় রাজা। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই বার্সেলোনা তার ঘর। খেলেছেন বার্সার একাডেমী  লা মাসিয়ার হয়ে।লিওর গল্পতো সবার জানা। আজ আর সে গল্প নয়।

"এমএসএন"-বার্সার ইতিহাসে নতুন মোড় এনে দেওয়া ত্রয়ী
লিও মেসি


নেইমার জুনিয়র! ব্রাজিলীয় অন্ডারকিড! ব্রাজিলের সন্তোসের হয়ে শৈল্পিক ফুটবল প্রদর্শিত নেইমারকে অনেকেই  ধরে নিয়েছিল রোনালদিনহোর  উত্তরসূরি। ২০১১ সালের কথা! বার্সেলনা, রিয়াল মাদ্রিদ আর চেলসির মতো দলগুলো চাই তাকে ঘিরে ইউরোপিয়ান ফুটবল মাতাতে। কিন্তু সন্তোস কতৃপক্ষ চাই ২০১৪ পর্যন্ত ক্লাবেই থাকবে তাদের ঘরের ছেলে নেইমার। নানা বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ২০১৩  সালের গ্রীষ্মে ব্রাজিলকে

"এমএসএন"-বার্সার ইতিহাসে নতুন মোড় এনে দেওয়া ত্রয়ী
নেইমার

কনফেডারেশন কাপ জিতিয়ে বার্সার ক্যাম্প ন্যুতে পাড়ি জমায় নেইমার।

লুইস সুয়ারেজের সাথে  বার্সার চুক্তি হয় ৫ বছরের।২০১৪ সালের ১১ জুলাই  লিভারপুল ছেড়ে বার্সায়  পাড়ি জমান  এই নাম্বার নাইন। কিন্তু ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ইতালি-উরুগুয়ে ম্যাচে ইতালিয়ান ডিফেন্ডার চিয়েল্লিনির কাধে কামড় বসিয়ে ৪ মাসের নিষেধাজ্ঞা পান। এ চার মাস করতে পারবেন না  ক্লাবের সাথে ট্রেনিং ও। পরবর্তীতে "Court of Arbitration for Sport" কোর্টে আপিল করে বার্সার হয়ে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে যান ক্লাবের নিউ নাম্বার নাইন। নিষেধাজ্ঞার কারনে ২০১৪-১৫ মৌসুমের শুরুর দিকের ম্যাচগুলো

"এমএসএন"-বার্সার ইতিহাসে নতুন মোড় এনে দেওয়া ত্রয়ী
লুইস সুয়ারেজ  ছবিঃ উইকিমিডিয়া  

খেলতে পারেন না  সুয়ারেজ। বার্সার হয়ে অভিষেক হয় ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ ।

মেসির "M", সুয়ারেজের  "S"  আর  নেইমারের  "N" নিয়ে তৈরী হয় বিশ্ব ফুটবল মাতানো ত্রয়ী "MSN"। সুয়ারেজের অভিষেকের মাধ্যমেই বিশ্বফুটবলে  যাত্রা শুরু হয় তাদের, ২০১৪ এর সেম্যাচ ছিলো  "এলক্লাসিকো"। সেম্যাচে বার্সা হারে ৩-১ ব্যবধানে।কিন্তু বার্সার হয়ে নেইমারের দেওয়া গোলে সুয়ারেজের অ্যাসিস্টে শুরু হয় এই ত্রয়ীর নতুন গল্প।


২০১৪-২০১৫ মৌসুম


মাত্রই শেষ  হওয়া ২০১৩-১৪ মৌসুমে ধুকতে থাকা বার্সা জিততে পারেনি কিছুই। নতুন মৌসুমে মেসি আর নেইমারের সাথে জুটি বাধবেন লুইস সুয়ারেজ। সুয়ারেজের নিষেধাজ্ঞা উঠলে "এমএসএন" ত্রয়ী অভিষিক্ত হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ এর  সেম্যাচে হার দিয়ে শুরু করা  বার্সার এ ত্রয়ীর সক্ষমতা নিয়ে  প্রশ্ন জাগতেই পারে সমর্থকদের মনে। কিন্তু সকালের মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখে যে সারাদিনের ভবিষ্যৎবাণী করা যায় না মৌসুম শেষে মনে করিয়ে দিয়েছিলো "MSN" ত্রয়ী।

মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের শৈল্পিক ফুটবল মন জয় করে নিয়েছিল ভক্তদের। সেবছর এ ত্রয়ী চ্যাম্পিয়ন্সলীগ, লালীগা আর কোপা দেল রে জয়ের  মাধ্যমে বার্সাকে ট্রেবল জেতায়। সেবার "MSN" ত্রয়ী  ২০০৮-০৯ মৌসুমে   হেনরী-ইতো-মেসি  ত্রয়ীর বার্সেলোনার ইতিহাসে এক মৌসুমে করা ১০০ গোলের রেকর্ড  কিংবা  রোনালদো-বেনজেমার -হিগুয়িনের  ২০১১-১২ মৌসুমে করা লালীগা ইতিহাসের ১১৮ গোলের রেকর্ড ভেঙে দেন। সেমৌসুমে "MSN" ত্রয়ী করে ১২২ গোল।


 ২০১৫-১৬ মৌসুম

আগের মৌসুমে করা ১২২ গোলের  গোলের রেকর্ড যে এক মৌসুমও টিকবে না তা হয়তো স্বয়ং "MSN"  ত্রয়ীও ভাবতে পারেনি। সেবার সকল প্রতিযোগিতা মিলে বার্সার করা ১৭৭ গোলের ১৩১ টি  এই ত্রয়ীর। সুয়ারেজের ৫৯ , মেসির ৪১ আর নেইমারের  গোল ৩১। শুধুমাত্র যে গোল করেছেন তা নয় , গোল করিয়েছেন ও সমানতলে। মেসির ২৩ ,সুয়ারেজের ২২ এর সাথে  নেইমারের অ্যাসিস্ট সংখ্যা ২০ ।

সেবার লীগ আর কোপা দেল রে তে অপ্রতিরোধ্য বার্সা কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হলো স্বদেশী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের। বার্সার "MSN" র ফর্ম বার্সেলোনাকে  এগিয়ে রেখোছিল ঠিকই   কিন্তু ঘরের মাঠে ২-১ ব্যবধানে জেতা বার্সা, অ্যাওয়ে ম্যাচে ২-০ গোলে হেরে বসলে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়।ফলশ্রুতিতে ঘরোয়া ডাবল জিতেই সে মৌসুম শেষ হয় বার্সেলোনার এ ত্রয়ীর।


২০১৬-১৭ মৌসুম

বার্সার সাথে সাথে "MSN" ত্রয়ীর জন্য হতাশার এ মৌসুম । পারফরমেন্সের  বিচারে এ ত্রয়ী এবারো কম যায়নি। আবারো পেরিয়েছেন মৌসুম শেষ সকল প্রতিযোগিতা মিলে ১০০ গোলের রেকর্ড। এবার  সংখ্যাটা ১১০। কিন্তু দলগত সফলতা মাত্র কোপা দেল রে শিরোপা।

স্প্যানিশ লালীগা তে জিনেদিন জিদান এর অপ্রতিরোধ্য রিয়াল মাদ্রিদ আর চ্যাম্পিয়নস লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে পাওলো দিবালার জুভেন্টাসের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় বার্সার।

তেমন দলগত শিরোপা না থাকলেও সমর্থকরা এ মৌসুমকে কোনদিন  ও ভুলতে পারবে না। সেবার চ্যাম্পিয়ন্সলীগের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনের ঘরের  মাঠে ৪-০ গোলে হেরে বিদায় নেবার অপেক্ষায় বার্সা। পরের পর্বে যেতে হলে গড়তে হবে ইতিহাস। ৩ সপ্তাহ পরের ম্যাচের আগমুহূর্তে নেইমারের  বলে বসলেন, "এক শতাংশ সুযোগ, ৯৯ শতাংশ বিশ্বাস"। আর মাঠে করে দেখালেন ও তেমন কিছুই। সেম্যাচে ৮৭ মিনিট পর্যন্ত ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বার্সার ,  মাত্র ৩ মিনিটে আরো দরকার ৩ গোল। ঠিক  তখনই  নেইমারের ফ্রিকিকে গোল। ৯১ মিনিটে পাওয়া পেনাল্টি নিয়ে  যদিও বিতর্ক রয়েছে, তবে নেইমার স্কোরবোর্ডে নাম লিখাতে ভুল করেননি আর ৯৫ মিনিটে নেইমারের ক্রস থেকে সার্জিও রবার্তোর গোলে তো চ্যাম্পিয়ন্সলীগের ইতিহাসের সেরা কামব্যাকের সাক্ষী হয়ে যায় সমর্থকেরা।

"এমএসএন"-বার্সার ইতিহাসে নতুন মোড় এনে দেওয়া ত্রয়ী
বার্সা বনাম পিএসজি


 বার্সেলোনার হয়ে এ মৌসুম নেইমারের শেষ মৌসুম।  নানা বিতর্কের পরে নেইমার ২২২ মিলিয়ন ইউরোতে  ২০১৭ এর গ্রীষ্মে  প্যারিস সেন্ট জার্মেইনে পাড়ি জমালে  ভেঙে যায় "MSN" ত্রয়ী।এর আগে মাত্র ৩ মৌসুমে এ ত্রয়ী করে ৩৬৩ গোল আর লালীগা, চ্যাম্পিয়ন্সলীগ আর  ট্রেবলসহ জয় করে  ৯ শিরোপা।


হয়তো পরিসংখ্যান মনে থাকবে না! মনে থাকবে না  কোন সবুজ মাঠের কথা! হয়তো গ্যালারীভর্তি দর্শকের সামনে দেখা কোন উদযাপনের চিত্র স্মৃতি থেকে মুছে যাবে। কিন্তু যখন একা থাকবেন , তখন হয়তো স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে উঠবে  কোন শৈল্পিক ফুটবলের দৃশ্য। হয়তো বুঝতেই পারবেন না চোখের কোনে কখন যেনো এক চিলতে পানি এসে জমা হয়েছে আর মনে মনে সম্ভবত বলেই ফেলবেন ভালো থেকো "MSN" ত্রয়ী।