ধারাবাহিকতা!  যা প্রতিটা বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে থাকে। এক, দুই এর পর তিন বলাটাই তো স্বাভাবিক,  তেমনই আজ, কালের পর পরশু বলাই শ্রেয়।  কিন্তু ফেব্রুয়ারি! ফেব্রুয়ারি কেন ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে নি? বছরের বাকি মাসগুলো ৩০ দিন কিংবা ৩১ দিনে শেষ হয়, কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে হয় কেন?  ফেব্রুয়ারি মাস  ২৮ দিন হওয়ার  রহস্য অনেকেরই অজানা ।
আমরা ইংরেজি মাসের যে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকি সেটা গ্রেগরিয়ান যুগের । গ্রেগরিয়ানদের আগে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮ দিন হওয়ার পিছনে যার ভুমিকা সব থেকে বেশি ছিল তিনি হলেন রোমের দ্বিতীয় রাজা নুমা পম্পিলিয়াস।

ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে কেন হয়?
 নুমা পম্পিলিয়াস
ছবিঃ উইকিমিডিয়া 

তিনি রাজত্ব গ্রহণের পূর্বে, রোমের চন্দ্র ভিত্তিক ক্যালেন্ডারে মাত্র ১০ টি মাসের উল্লেখ ছিল।  মার্চ মাসকে ধরা হতো বছরের প্রথম মাস আর ডিসেম্বর মাসে বছর শেষ হতো। কিন্তু এই গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিতে একটি অদ্ভূত ব্যাপার পরিলক্ষিত হয় । প্রতিটি মাসই সম্পন্ন হয় ৩০ দিনে, অথবা ৩১ দিনে। ব্যতিক্রম শুধু ফেব্রুয়ারি মাস, যা মাত্র ২৮ দিনেই সম্পন্ন হয়।
 ফেব্রুয়ারি মাস মাত্র ২৮ দিনে শেষ হওয়ার জন্য দায়ী করা হয় রোমানদের এবং তাদের কুসংস্কারকে।  সেময়ের গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিতে  ১২টি মাস ছিল না, ছিল মাত্র ১০টি মাস। এই ১০ মাসের  মধ্যে ছয়টি মাস ছিল ৩০ দিনের, এবং বাকি চারটি মাস ছিল ৩১ দিনের। তাই, সব মিলিয়ে এক বছর সম্পন্ন হতো (৩০*৬ এবং ৩১*৪) বা মাত্র ৩০৪ দিনে।  কিন্তু এই বর্ষপঞ্জি সাধারণ চন্দ্রবর্ষ  থেকে খানিকটা ভিন্ন হওয়ায় তারিখ গণনার কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছিলো। তাই খ্রিস্টপূর্ব ৭৫০ অব্দের দিকে রোমের দ্বিতীয় রাজা নুমা পম্পিলিয়াস ক্ষমতা গ্রহণের পর সিদ্ধান্ত নেন, সাধারণ চন্দ্রবর্ষ ও গ্রেগরীয় বর্ষের মধ্যে একটি সমন্বয় সাধন করবেন।
ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে কেন হয়?
গ্রেগরিয়ান  ক্যালেন্ডার
ছবিঃ উইকিমিডিয়া 


তখনকার দিনে রোমের একটি খুবই প্রচলিত কুসংস্কার ছিল। জোড় সংখ্যাকে অমঙ্গলের চিহ্ন মনে করা হত।   তাই রাজা নুমা পম্পিলিয়াস প্রতিটি ৩০ দিনের মাস থেকে ১ দিন করে বাদ দিয়ে, মাসগুলোকে মঙ্গলময় করেন । যার ফলে বছরে দিনসংখ্যা নির্ধারিত হয়  হয় ২৯৮দিনে যা পুর্বে ৩০৪ দিন ছিল।  কিন্তু এতে সমাধানের থেকে সমস্যা আরো জটিল হয়।  কারণ চন্দ্রবর্ষ সম্পন্ন হয় ৩৫৪.৩৬৭ দিনে। তাই রাজা ৩৫৪ দিনের নতুন বর্ষপঞ্জি বানাতে চাইলেন। কিন্তু ৩৫৪ ও তো জোড় সংখ্যা।  তাই তিনি ঠিক করেন হয় বছরে ৩৫৩ দিন হবে অথবা ৩৫৫ দিন হবে। অবশেষে ঠিক করলেন এক বছরে মোট ৩৫৫ দিন থাকবে । এজন্য আগের ১০ মাসের সাথে আরো দুই মাস যোগ করা হ্ল।  দুই মাসে ছিল ৫৭ দিন।  আর এই ৫৭ দিন ভাগ করা হলো  জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে, যা ডিসেম্বরের পরে আসবে। কিন্তু ৫৭ দিন যদি দুই মাসের মধ্যে ভাগ করতে হয় এবং জোড় সংখ্যা মুক্ত রাখতে হয় তাহলে ২৮.৫ দিন করে ভাগ করতে হয়, কিন্তু মাসের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব ছিল না। তাই জানুয়ারি মাসকে ২৯ দিনের বানিয়ে, ফেব্রুয়ারি মাসকে ২৮ দিনের করলেন রাজা নুমা। তাই রোমের কাছে ফেব্রুয়ারি মাস জোড় সংখ্যা হওয়ায় দুর্ভাগা মাস হিসেবেই পরিচিতি পায়।  তাদের কুসংস্কারের জন্য নষ্ট হয় ৩০,৩১ দিনের ধারাবাহিকতা।  সব কটি মাস যেখানে ৩০, ৩১ দিনের ফেব্রুয়ারি সেখানে ২৮ দিনেরই থেকে যায়।