নজরুল ইসলাম ছবিঃ উইকিমিডিয়া |
কাজী নজরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলাদেশে পেয়েছেন জাতীয় কবির মর্যাদা। জাতীয় কবি ছাড়া তিনি বিদ্রোহী কবির খ্যাতিও অর্জন করেছেন। লেখালেখিতে নজরুল ছিলেন অসম্ভব রকম বিদ্রোহী স্বভাবের। তার বিভিন্ন লেখনীতে রয়েছে সেই বিদ্রোহের চিহ্ন। কিন্তু তার হঠাৎ করে বাংলা সাহিত্য এবং সংগীতজগতে আসাটা উল্কার মতো মনে হয়। তবে যেভাবেই সাহিত্য জগতে পদর্পন করুক তিনি আসলে ছিলেন সাহিত্য আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র।
কাজী নজরুল ইসলামের লেখা যেমনই ব্যতিক্রমী তার জীবনের গল্পও তেমন বৈচিত্রময়। সময়ের সাথে সাথে মানুষের অনেক পরিবর্তন হয়, কাজী নজরুলের এই পরিবর্তন সব থেকে বেশি প্রভাবিত করেছিল তার নামকে। দুখু মিয়া থেকে শুরু হয়েছিল তারপর নজর আলি, নজর আলি থেকে নজরুল এসলাম, নজরুল এসলাম থেকে নজরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম থেকে কাজী নজরুল ইসলাম, কাজী নজরুল ইসলাম থেকে হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলাম, এবং শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম হয়ে উঠলেন তিনি।
জন্ম ও ছেলেবেলা
ছেলেবেলার নজরুল ছবিঃ উইকিমিডিয়া |
সাহিত্যে পদার্পন
লেটো দলে থাকতেই নজরুলের সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। লেটো গানের দলেই তিনি অভিনয় শিখতেন এবং তাদের নাটকের জন্য গান ও কবিতা লিখতেন। এখানে থেকেই তিনি বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য অধ্যয়ন শুরু করেন। একইসাথে তিনি বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র-গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে থাকেন। খুব কম বয়সেই তিনি বেশকিছু লোকসঙ্গীত রচনা করেন যা তার নাট্যদলে পরিবেশিত হত। ১৯১০ সালে নজরুল লেটো গানের দল ছেড়ে দেন এবং পুনরায় পড়ালেখায় মনোনিবেশ করেন। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বেশি দিন পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি তার। তাই আবার তিনি কবিগানের দলে যোগ দেন। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের জন্ম দেন। এই বিদ্রোহী কবিতা ও ভাঙ্গার গান সঙ্গীত বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। আসলে বিদ্রোহী কবিতার জন্যই নজরুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।দাম্পত্য ও সৈনিক জীবন
নজরুল একবার কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে এসে তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পরেন। এখানে প্রমীলা দেবীর সাথে তার পরিচয় হয় এবং তিনিই নজরুলের পরিচর্যা করেন। এক পর্যায়ে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে তিনি চার সন্তানের জনক হন।১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন কাটাতে শুরু করেন। তিনি সেনাবাহিনীতে মাত্র আড়াই বছর সময় অতিবাহিত করেন । এই অল্প সময়েই তিনি বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন এই আড়াই বছরে।
পুরষ্কার ও সম্মাননা
বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত হন । ১৯৭৬ কবিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানসূচক একুশে পদক প্রদান করা হয়। কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশর জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার 'জগত্তারিণী স্বর্ণপদক' প্রদান করা হয় কবিকে । ১৯৬০ সালে ভারত সরকার কবিকে পদ্মভূষণে ভূষিত করেন। এছাড়াও নজরুলের নামে বাংলাদেশ ও ভারতে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একাডেম। তার লেখা 'চল চল চল' কবিতাটি বাংলাদেশের রণ সংগীত হিসিবে গৃহীত হয়েছে।নজরুলের সমাধি ছবিঃ উইকিমিডিয়া |
0 Comments
Post a Comment