লীলাবতী- কেন হল ভাস্করাচার্যের বিখ্যাত গনিত বইয়ের নাম
ভাস্করাচার্য      image credit
লীলাবতী, একটা বিখ্যাত নাম। হুমায়ুন আহমেদের বিখ্যাত এক উপন্যাসের নাম, প্রাচীন ভারতের বিদুষী নারী ক্ষনা’র প্রকৃত নাম, আবার প্রাচীন ভারতেরই বিখ্যাত গণিতবিদ ও জোর্তিবিজ্ঞানী ভাস্করাচার্যের বিখ্যাত গণিত বইয়ের নাম।
আজ আমরা জানব ভাস্করাচার্যের “লীলাবতী” সম্পর্কে। কে ছিল এই লীলাবতী? কেনই বা রাখা হল বইয়ের নাম লীলাবতী।
চলুন তাহলে প্রবেশ করি প্রাচীন ভারতে।


শুরুতেই জানতে হবে কে ছিলেন এই ভাস্করাচার্য?

প্রাচীন ভারতে গণিত ও জোর্তিবিজ্ঞানে যারা পারদর্শী ছিলেন তাদের মধ্যে আর্য ভট্ট, বরাহ মিহির, ভাস্করাচার্য অন্যতম।
ভাস্করাচার্য দ্বিতীয় ভাস্কর নামে সর্বাধিক পরিচিত। ধারণা করা হয় তিনি ভারতের বিজাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। স্ত্রীর সাথে তিনি দক্ষিণ ভারতের পদ্মপুকুর পাড়ে বাস করতেন। তাদের ছিল এক কন্য। নাম ছিল তাঁর লীলাবতী। এই লীলাবতীর নামানুসারেই নামকরণ করা হয়েছিল ভাস্করাচার্যের গণিতশাস্ত্র “লীলাবতী’র”
ভাস্করাচার্যের শ্রেষ্ঠ রচনা “সিদ্ধান্ত শিরোমণি” রচিত হয় ১১৫০ সালে। এই “সিদ্ধান্ত শিরোমণি’র” আছে মোট চারটি খন্ড। গ্রহ গণিতাধ্যায়, গোলাধ্যায়, বীজগণিত ও লীলাবতী। এই শেষের “লীলাবতী” বইটির নামকরণ করা হয় তাঁর কন্যার নামানুসারে।

লীলাবতী- কেন হল ভাস্করাচার্যের বিখ্যাত গনিত বইয়ের নাম?
লীলাবতী বইয়ের অংশ,    ছবিঃ উইকিমিডিয়া

কেন রাখেন “লীলাবতী” নাম?

ইতিহাসের অন্যান্য ঘটনার মতই এই কাহিনী আমাদেরকে যেটা বলবে সেটা আসলেই সত্য কি না তা নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ। ভাস্করাচার্যের কন্যা লীলাবতী ছিল খুবই রূপসী ও বুদ্ধিমতী। সময়ের সাথে সাথে বড় হতে থাকে লীলাবতী। একসময় তাঁর বিয়ের বয়স হয়। ভাস্করাচার্য একদিন মেয়ের রাশিফল দেখে জানতে পারে নির্দিষ্ট এক শুভ লগ্নে মেয়ের বিয়ে না দিতে পারলে মেয়ের জীবনে দেখা দিবে অমঙ্গল। কিন্তু এ ঘটনা তিনি লীলাবতীকে জানালেন না। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ভাস্করাচার্য একটা অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করলেন। তিনি তৈরি করলেন এক জলঘড়ি, যা ঠিক সেই নির্দিষ্ট শুভ ক্ষণের জানান দিবে। কিন্তু অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস, কৌতূহল বশত লীলাবতী দেখতে গেলেন কি করছে তাঁর বাবা। তক্ষণই ঘটে গেল এক বিপর্যয়। তাঁর নাকের নথ থেকে খুলে পড়ল একটুকরা হিরে খন্ড জলঘড়ির জলে, যা সময়ের হিসাব গোলমাল করে দেওয়ার জন্যই যথেষ্ট। ভাস্করাচার্য এ ঘটনা জানতে পারলেন না। কন্যা লীলাবতীর বিয়ে হয়ে গেল এক অশুভ ক্ষণে। ফলে যা হবার তাইই হল, বিয়ের কিছুদিন পর মারা গেল লীলাবতীর স্বামী। অল্প বয়সে বৈধব্য প্রচণ্ড দাগ কেটে গেল লীলাবতীর মনে যা দেখে মনে কষ্ট পেলেন দরিদ্র ভাস্করাচার্য। তিনিও অল্প বয়সে কন্যার বৈধব্য মেনে নিতে পারলেন না। তিনি তাঁর কন্যা লীলাবতীর জন্য চাইলেন কিছু করতে যেন সমগ্র পৃথিবীর লোক সারা জীবন মনে রাখে তাঁর কন্যাকে। তাই তিনি তার বিখ্যাত গণিতের বই “সিদ্ধান্ত শিরোমণি’র” এক খণ্ডের নাম দিলেন তাঁর কন্যার নামানুসারে “লীলাবতী”। এভাবে অমর হয়ে থাকলেন সকলের মনে “লীলাবতী”