সবে  পিএইচডি  শেষ  করেছেন! দেশে ফিরতে হবে। কিন্তু  স্ত্রী গুলতেকিনকে কেনো যেন  সেযাত্রায় টানছে না। তিনি বলে বসলেন, "দেশে ফিরে তুমি যা বেতন পাবে, সবাইকে নিয়ে  তিনবেলা খেতে হিমসীম খাওয়া লাগবে।"  প্রতি উত্তরে তিনি বলেছিলেন, "যে দেশের স্বাধীনতার জন্য আমার বাবা শহীদ হয়েছে, সে দেশ ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না"।  বলছিলাম দেশ বরেণ্য  কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কথা।

"এইসব দিনরাত্রি"- হুমায়ুন আহমেদের দু'টো ইচ্ছে-পূরণের গল্প।
ছবিঃ উইকিমিডিয়া 



দেশে যখন ফিরলেন তখন তার প্রচন্ড  অর্থনৈতিক দুর্দশা। দীর্ঘ  সাত বছরের প্রবাস জীবনে সঞ্চয় মাত্র ২০০ ডলার। সেসময় বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে   সবাই টেলিভিশন আর ফ্রিজ নিয়ে আসতো। অর্থনৈতিক কষ্টে ভোগা হুমায়ূন কিনতে পেরেছিলেন শুধু  একটা ফ্রিজ।

যথারীতি দেশে ফিরলেন। উঠলেন নুরজাহান রোডের দুইরুমের একটা বাসায়।  এক রুমে  থাকতেন হুমায়ূনের মা, ছোটভাই শাহীন আর বোন মনি আর অন্যরুমে স্ত্রী, ছেলেমেয়েদেরকে  নিয়ে আড়াআড়িভাবে থাকতেন তিনি।  ময়মনসিংহের ভাষায় "ফাত তাড়া" হয়ে থাকতেন। বাসায় টিভি না থাকায়  কন্যা নোভা আর শিলা টেলিভিশন দেখতে যেতো পাশের ফ্লাটে। একরাতে  সেবাসায় মেহমান আসাতে  টেলিভিশন বন্ধ করে দেয় ফ্লাটবাসীরা। পরে বাসায় ফিরে  নোভা বাবার গলা জড়িয়ে বললো, বাবা আমাদের একটা রঙিন টেলিভিশন কিনে দিবে। হুমায়ূন আহমেদ  বললেন, অবশ্যই দিবেন।কিন্তু তিনি জানতেন না, কেমন করে কিনে দিবেন।  শুধু ভাবছিলেন যেমন করে হোক কিনে দিতে হবে।

সেসময়ে বিটিভির নওজেশ আলী খানের সাথে পরিচয় হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের। তিনি হুমায়ূন আহমেদকে বললেন বিটিভির জন্য একটা ধারাবাহিক নাটক লিখতে।লেখক লিখলেন, "এইসব দিনরাত্রি"। এ নাটক প্রসঙ্গে লেখক জানান, রঙিন টেলিভিশন কেনার টাকা গোছানো শেষ হলে  নাটকের টুনি চরিত্রের মৃত্যু দিয়ে নাটক শেষ করে দেন।

"এইসব দিনরাত্রি"- হুমায়ুন আহমেদের দু'টো ইচ্ছে-পূরণের গল্প।
হুমায়ুন আহমেদের সমাধি
ছবিঃ উইকিমিডিয়া   


বিটিভিতে নাটকটি জনপ্রিয় হলে , এক সাংবাদিক লেখককে প্রশ্ন করেন, "এইসব দিনরাত্রি - লেখার পিছে আপনার অনুপ্রেরণা কি?"  প্রতিউত্তরে লেখক জানান," একটা রঙিন টেলিভিশন কেনা।"  একথা শুনে এইসব দিনরাত্রি নাটকে অভিনীত অভিনেতারা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। সবথেকে বেশী  সমলোচনা করলেন অভিনেতা আবুল খায়ের। পরে কোন উপায় না পেয়ে হুমায়ূন  আহমেদ  আবুল খায়েরকে নিজের বাসায় আমন্ত্রণ করলেন  আর দেখালেন একজন পিতার কাছে সবথেকে মধুর দৃশ্য, তার মেয়েরা কত আনন্দ করে টেলিভিশন দেখছে। সেদৃশ্য দেখে আবুল খায়ের কেঁদে ফেললেন।

"এইসব দিনরাত্রি" নাটক নিয়ে লেখক বলেন, এ নাটকটি তার দুটি ইচ্ছা পূরণ করেছে। প্রথমটি, তিনি  প্রথমবারের মতো বাচ্চাদের আবদার পূরণ করতে পেরেছিলেন  আর দ্বিতীয়টি   দর্শকদের কাছে লেখক হুমায়ূনের পরিচিতি এনে দিয়েছিলো। কেননা সেসময় এইসব দিনরাত্রি নাটকের শেষ পর্বের আগে ভারতীয় পত্রিকা  " স্টেটসম্যান "  ছেপেছিল , " আজরাতে  "এইসব দিনরাত্রি "  নাটকের শেষ পর্ব, এরপর আমরা কি দেখবো!"