নেপোটিজম! নেপোটিজম! নেপোটিজম! স্টার কিড! স্টার কিড! স্টার কিড!

দুলকার সালমানের পাঁচফোঁড়ন !

শেষ কয়েকদিনে শব্দ দুইটা শুনতে শুনতে হয়তো আপনার কানে তালা লেগে যাবার উপক্রম।  সুশান্তের মৃত্যুর পরে বলিউডকে নেপোটিজমের আদলে সমালোচনার জোয়ারে ভাসিয়েছেন সমালোচকেরা।

ভারতে বলিউড ছাড়াও প্রায় প্রতিটা রাজ্যেই রয়েছে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি।  অঙ্গরাজ্য কেরেলা এর বাইরে নয়।  কেরেলাতে রয়েছে মালায়লাম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি।  সেখানেও স্টার কিডের ছড়াছড়ি।  কিন্তু পার্থক্য একটাই - এদের প্রত্যেকেই নিজস্ব প্রতিভা  দ্বারা বিকশিত হয়ে নিজেদেরকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।  দুলকার সালমানও এর বাইরে নয়।

দুলকার মলিউডের মেগাস্টার মামুট্টির ছেলে।  সেই হিসাবে চলচ্চিত্রে আসা তার ছিল সময়ের ব্যপার।  কিন্তু তা তিনি করেন নি।  পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট।  চাকুরীও করেছেন বিভিন্ন কম্পানিতে।  পরে সব ছেড়েছুড়ে পাড়ি জমিয়েছেন সিনেমা জগতে।  প্রথম সিনেমা "সেকেন্ড শো" এর পূর্বে  মুম্বাইয়ের "জন বেরী ওয়ার্কশপ " থেকে অ্যাক্টিংয়ের ওপর তিন মাসের কোর্স করেন।  সেকেন্ড শো সিনেমা মুক্তি পাবার পরে সমালোচকেরা প্রশংসার জোয়ারে ভাসান দুলকারকে।  এখন পর্যন্ত দুলকার সালমান তার বাবা মামুট্টির প্রযোজনায় অভিনয় করেননি কোন সিনেমায়।  নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজের মতো করে।

চার্লি

হিমুর কথা মনে আছে।  হুমায়ূন আহমেদ পরম মমতায় লিখেছেন এই চরিত্রটিকে।  পকেটহীন হলুদ পান্জাবী পরে শহরের দূর-দূরান্তে খালি পায়ে উদ্দেশহীনভাবে হেটে বেড়াতো।  লেখক হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছেন ২০১২ সালে।  এরপর থেকে আর দেখা মেলেনি হিমালয়ের।  লেখকের মৃত্যুর বছর তিনেক পরে, কেউকেউ হিমুকে খুঁজে পেয়েছিল।  তবে সেটা রুপালী পর্দায়।  মালায়লাম সিনেমা  চার্লিতে।


"তেসা" নামের এক ভবঘুরে মেয়েকে কেন্দ্র করে শুরু হয় সিনেমার গল্প।  বিয়ে করবে না বলেই বাড়ি থেকে পালিয়ে কেরালা শহরে বাসা ভাড়া নেয়।  বাসার ভেতরে ঢুকেই তো হতবাক! যতসব আজগুবি জিনিসে পরিপূর্ণ ঘর।  ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে খুঁজে পাই  একটি অসম্পূর্ণ কমিক বুক। কমিক বইয়ের অসম্পূর্ণ গল্পের বাকি অংশ জানতেই তেসা নামের মেয়েটি ব্যাকুল হয়ে পড়ে। সেখান থেকে শুরু হয় সিনেমার মূল গল্প।

কমিক গল্পের এক চরিত্রের সাথে দেখা মেলে তেসার। তার কাছ থেকে গল্প এবং লেখকের সম্বন্ধে কিছু তথ্যতো পাওয়া যাই! কিন্তু লেখক কিংবা গল্প কোনটারই কোন সুরাহা মেলেনা।  তেসা খুঁজতে
 পাগলের মতো করে। একে একে দেখা মেলে গল্প লেখকের কিছু পরিচিত মানুষের। তাদের কাছ থেকে পরিচয় মেলে ভবঘুরে ধাচের পরোপকারী স্বভাবের এক তরুনের। নাম তার চার্লি! যার স্বভাবে হুমায়ূনের হিমু চরিত্রের পরিপূর্ন ছাপ রয়েছে।  এসব নিয়েই গল্প এগোতে থাকে।


চোখধাঁধানো সিনেমাটোগ্রাফি, অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, সাথে দুর্দান্ত অভিনয়।  কি নেই এই মুভিটিতে।  সিনেমাটি শেষ করবেন এক অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে।  হয়তো একবার দেখার পরে আরো কয়েকবার অনায়াসেই দেখতে পারবেন।

সিনেমাটি কেরালা স্টেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেতা, সেরা অভিনেত্রী এবং সেরা পরিচালকসহ ৮টি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।  মার্টিন প্রক্কট পরিচালিত ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমাটি দুলকার সালমানকে করে তুলেছে অনন্য।


উস্তাদ হোটেল 

নেই কোনো টুইস্ট, নেই কোনো কমেডি! ফাইট সিনতো  নেই সেইসাথে খুঁজে পাবেন না তেমন কোনো রোমান্স সিনের দৃশ্যও। অথচ সিনেমা দেখলে তৈরি হবে মনের মাঝে অন্য ধাচের মায়া, সিনেমা শেষে আপনার ভেতরে ছড়িয়ে পড়বে মুগ্ধতা। ২০১২ সালে মুক্তি পায় দুলকার সালমান অভিনীত আনোয়ার রশীদ পরিচালিত সিনেমা 'উস্তাদ হোটেল'।


দাদা-নাতির গল্প নিয়েই তৈরী হয়েছে উস্তাদ হোটেলের দৃশ্যপট। দাদা-নাতির এই দৃশ্যপটে তুলে আনা হয়েছে, রান্না শিল্পকে যা কোন অংশে ধর্মের থেকে কম নয়। এই সিনেমা শেষেই বুঝতে পারবেন, একজন রাধুনি শুধুমাত্র পেটই ভরাই না, মনও ভরাতে পারে।

দুলকারের অভিনীত দ্বিতীয় সিনেমা  " উস্তাদ হোটেল "। এ সিনেমার মধ্য দিয়েই মালায়লাম সিনেমা জগতে নিজের আগমনী বার্তা জানান।


ব্যাঙ্গালোরে ডেইজ 

গল্পটা তিন কাজিনের। দেভিয়া, কুট্টান আর অর্জুনের। তিন বন্ধুর সুখ-দুঃখ , আনন্দ-বেদনা- হতাশা থেকে ঘুরে দাড়ানোর মন্ত্র নিয়েই গল্পের কাহিনী। তাদের ব্যাঙ্গালোরে কাটানো দিনগুলোকে নিয়েই  ব্যাঙ্গালোরে ডেইজ।


ভালবাসা, আবেগ, অনুভূতির যেন অন্যরকম এক মেলবন্ধন ফুটিয়ে তুলেছে। কখনো হাসবেন! কখনো বা কাঁদবেন! কতই বা সাবলীল ভঙ্গীতে গল্পের কাহিনী বর্ননা করেছেন। সিনেমাটি আপনাকে করে তোলবে মোহগ্রস্ত।

কে নেই এই সিনেমাতে! দেভিয়া চরিত্রে নাজরিয়া, কুট্টান চরিত্রে নিভিন পাউলি আর অর্জুনে দুলকার সালমান। আরও আছেন ফাহাদ ফাজিল, পার্বতী আর নিতিয়া মেননের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।

অন্জলী মেনন পরিচালিত ২০১৪ সালে প্রকাশিত ব্যাঙ্গালোরে ডেইজ সিনেমাটি আপনার পুরানো দিনের কথা মনে করিয়ে স্মৃতিকাতর করে তুলতে যথেষ্ট ।

কারওয়ান

এই গল্প অবিনাশ নামের এক তরুণের।  যে কিনা বাবার ইচ্ছাতে নিজের মনের বিরুদ্ধে আইটি সংস্থায় কাজ করছে। যার মাথায় চেপেছিল ফটোগ্রাফির ভুত।  সে আজ সফটওয়ার এর চার দেয়ালে বন্দী। ফটোগ্রাফি ছেড়ে চাকুরী বেছে নিতে প্রলুব্ধ করাই বাবার সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাই অবিনাশের।


কোন এক রাতে, একটা ট্রাভেল এজেন্সি ফোন করে জানাই  , তার পিতা দুর্ঘটনাতে  মারা গেছে।  লাশ আনতে যেতে হবে কার্গ অফিসে। লাশ সংগ্রহ করার পরে দেখলো, লাশটা তার বাবার নয়। কোচিতে বসবাস করা এক বৃদ্ধার।  এবার শুরু হলো ক্যাব ড্রাইভার শওকতকে নিয়ে যাত্রা। কিছুদূর গিয়ে অবশ্য বৃদ্ধার নাতনী তানিয়ার সাথেও দেখা হলো।

এরপর শুরু হলো তিনজন মানুষের সাথে একটা লাশের যাত্রা! সেযাত্রা ফুটিয়ে তুলেছে আধুনিক যুগের অনেক তরুণের প্রতিচ্ছবি।  এ সিনেমায় হয়তো জীবনের এক অপরূপ শিক্ষার ইঙ্গিত প্রদান করেছে। সিনেমায় অবিনাশ চরিত্রে অভিনয় করেছে দুলকার সালমান আর শওকত চরিত্রে ইরফান খান। ২০১৮ সালে এ সিনেমার মধ্য দিয়েই বলিউডে আঙিনায় পা রাখেন দুলকার।

মাহানতি

মহানতি সিনেমার দৃশ্যপট দক্ষিণের বিখ্যাত অভিনেত্রী সাবিত্রীর জিবনী নিয়ে। ২০১৮ সালে এ সিনেমাতে সাবিত্রী চরিত্রে অভিনয় করে কৃতী সুরেশ আর তার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করে দুলকার সালমান।


মাঝেমাঝেই আমরা সাধারণ দর্শকেরা ভুলে যাই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ও সাধারণ মানুষই।  অভিনেত্রী সাবিত্রী শূন্য থেকেই সফলতার শীর্ষে উঠেছেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে গ্রাম্য নাট্যদলে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ানো তরুণী কেমন করে দক্ষিণা চলচ্চিত্রের বিখ্যাত অভিনেত্রী হলেন সেটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ সিনেমায়। দুলকার সালমান এ চলচ্চিত্রে নেগেটিভ রোল পালন করে।

নাগ অশ্বিন পরিচালিত এ সিনেমাতে দুলকার-কৃতী ছাড়াও  বিজয় দেবরাকোন্ডা-সামান্তাদের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অভিনয় করেছে।


এসব চলচ্চিত্র ছাড়াও দুলকারের হান্ড্রেড ডেইজ অব লাভ, ওকে কানমানি, কমরেড ইন অ্যামেরিকা, কালি, নেলাকাশাম পাচাকারাল ছূভারানা ভূমি সিনেমার সহজ-সাবলীল গল্পগুলো আপনাকে কখনো হাসাবে আবার কখনো কাঁদাবে। কিন্তু উস্তাদ হোটেলের ফ্যাজল, চার্লির চার্লি, ব্যাঙ্গালোরে ডেইজের অর্জুন, কারওয়ানের অবিনাশ, মহানতির জেমিনি স্পেশাল! ভেরী স্পেশাল ।