ইতালীয় রেঁনেসার সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ লিওনার্দো-দ্য-ভিঞ্চি।
যিনি ১৪৫২ সালের ১৫ এপ্রিল
ইতালির ফ্লোরেন্সে প্রদেশে এক কুমারী নারীর গর্ভে জন্মগ্রহন করেন। তার মায়ের নাম ছিল
ক্যাটরিনা। ক্যাটরিনা পেশায় ছিলেন
একজন দাসী। বিশিষ্ট শিল্পী ও ভাস্কর আন্দ্রেয়া ভেরোচ্চিয়োর কাছে ভিঞ্চি ছবি আকা
শুরু করেন। লিওনার্দো-দ্য-ভিঞ্চি যতগুলো বিখ্যাত চিত্রকর্ম সম্পর্কে মানুষ জানে তার মধ্যে মোনালিসা অন্যতম।
ভিঞ্চির মোনালিসা কেন সবচয়ে বেশি আলোচিত!
প্রায় ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ সালের মধ্যে ভিঞ্চি তার সবচেয়ে আলোচিত ছবি ‘মোনালিসা’ একেছিলেন। মোনালিসার ছবি দেখলে বা ছবির কথা উঠলে ভিঞ্চির কথাও
এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। মোনালিসার চিত্রকে ঘিরে ক্রমাগত বিভিন্ন রহস্যের সৃষ্টি
হয়েছে। কেননা যে যেমন ভাবে খুশি মোনালিসাকে আবিষ্কার করতে পারে নিজের মধ্যে। মোনালিসার দিকে তাকিয়ে হাসলে মনে হয় সেও হাসছে, মন খারাপ থাকলে
মনে হয় মোনালিসার মনের আকাশেও কালো মেঘের ঘনঘটা। তাইতো সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে
মোনালিসার চমৎকার হাসি ও তার দৃষ্টিনন্দন চাহনি। শিল্পরসিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সকলেই বিশ্বাস
করেন, মোনালিসার দৃষ্টি তার দর্শকদের অনুসরণ করে। অর্থাৎ, যে দিক থেকেই মোনালিসাকে
দেখা হয় , তার আকর্ষনীয় চোখ যেন সেই দিকেই ঘুরে যায়। একারণে ‘মোনালিসা এফেক্ট’ নামে একটি বিশেষ
টার্মও পরিচিত আছে।
ভিঞ্চি কেন এঁকেছিলেন মোনালিসাকে?
ছবিঃ উইকিমিডিয়া |
একটি প্রচলিত কথা আছে ' হাসলাম তো ফাসলাম '। মানুষের
শরীরের অপরূপ সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ করে হাসি। যে হাসিতে প্রেমিক মনে নিমিষে ভালোবাসার
জালে আটকা পরে যায়। আসলে ভিঞ্চির রঙ-তুলির মোনালিসাও
যেন তেমনি এক অপরূপ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার আদৌ
কি কোন উৎস আছে নাকি শিল্পি মনের এক কল্পনার প্রতিচ্ছবিই এই মোনালিসা!
শিল্পির মনের মানষিক প্রশান্তি! সে তো আশ্চর্যের
ব্যাপার। অনেক মায়ামুখের অসংখ্য ছবি আকলেও কিছুতেই যেন ভিঞ্চির
মন ভরেনি। কিছু না কিছু
কমতি যেন থেকেই যায়, চাইলে আর একটু
ভালো করা যেত এমন ভাবনা গুলো সবসময়
শিল্পির মনে উঁকি- ঝুঁকি দেয়। তাই জিয়োকান্ত
নামে এক ধনী বৃদ্ধের তৃতীয় স্ত্রী মাদোনা এলিজাবেথ কে দেখার পর ভিঞ্চির মনে হয়েছিল এলিজাবেথের ঠোঁটের কোনে এক অপরূপ হাসি আছে । বিচিত্র এ হাসি মনে
দাগ কাটলো ভিঞ্চির মনে। এলিজাবেথের এই আকর্ষনীয় হাসির
প্রেমে পাগলপ্রায় ভিঞ্চি এক প্রকার ভুলেই গেলেন এলিজাবেথ অন্যের স্ত্রী। এই মায়াবী একটি হাসির জন্যই যেন ভিঞ্চি যেন অপেক্ষায় ছিলেন কয়েক বছর।
শিল্পি মনের বহিঃপ্রকাশ পায় তার কর্মে তাইতো মনের সিংসাসনে বসিয়ে রাখা সেই
হাসি প্রকাশ পেল ভিঞ্চির ক্যানভাস আর রঙ তুলিতে। সমগ্র বিশ্ব তখন
অবাক চোখে দেখলো
সেই মায়াবী ছবি মোনালিসা। যেটি হয়ে রইল চিত্র শিল্পের জগতে ভিঞ্চির সর্বকালের সেরা সৃষ্টি।
ছবিঃ উইকিমিডিয়া |
এই প্রেমের গল্প মেনে নিতে নারাজ অনেকে। তাই ভিন্ন ভিন্ন মতবাদও রয়েছে মোনালিসার এই
চিত্রকর্ম নিয়ে। অনেকে তো নিজেকে মোনালিসা
বলেও দাবি করেছেন। তাদের চোখে লিওনার্দো কলপনা থেকে তার আদর্শ রমণীর ছবি
এঁকেছেন। ভিঞ্চি তার ছবিতে যে মায়াবী প্রেমময়ী হাসির বর্ণনা দিয়েছেন ভাসারি তার এক লেখাতে উল্লেখ করেছেন যে," ছবি আঁকার সময় মোনালিসার মনোরঞ্জনের জন্য লিওনার্দো ভাড়া করা লোকজন দিয়ে
গানবাজনার ব্যবস্থা করে ছিলেন। এমনকি তাকে হাসিখুশি এবং উৎফুল্ল রাখার জন্য পেশাদার
ভাঁড়েরও ব্যবস্থা ছিল" । মোনালিসার এই রহস্যময় হাসি
লিওনার্দোর একধরনের তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এমন কথাও প্রচলিত আছে।
মোনালিসা নিয়ে সমালোচনারও যেন শেষ
নেই৷। কিছু গবেষক দাবি করেছেন, মোনালিসার হাসিতে নারীবাদের প্রকাশ
ঘটেছে। আবার কিছু লোকের দাবি যে মোনালিসা ভিঞ্চিরই নিজস্ব চেহারার রমণীয়
রূপ। এই ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গ্রাফিক আর্টিষ্ট লিলিয়ান শোয়ার্জ ১৯৯৮ সালে
কম্পিউটার ভিত্তিক প্রযুক্তির সাহায্য নেন। লিওনার্দোর নিজের প্রতিকৃতি নিয়ে একে উল্টে দিয়ে এবং মোনালিসার
প্রতিকৃতি পাশাপাশি রেখে কিছু নিরীক্ষা
চালান লিলিয়ান শোয়ার্জ । মোনালিসা
এবং লিওনার্দোর নাক, মুখ, কপাল, চোয়ালের হাড়, চোখ এবং ভ্রু সবকিছুই একেবারে সরলরেখায়
অবস্থান করছে এমনই প্রকাশ করেছেন লিলিয়ান
শোয়ার্জ ।
প্রকৃতপক্ষে মোনালিসা লিওনার্দোরই
রমনীয় রুপ নাকি তার প্রেমময়ী মায়াবতী নারী
এ নিয়ে মতবাদের শেষ নেই। রহস্যময় হাসির অধিকারী
মোনালিসার মতই ঘোলাটে রহস্য তার সৃষ্টি নিয়ে।
তবে সত্য যেটাই হোক লিওনার্দো-দ্য-ভিঞ্চি তার রঙ তুলিতে যে প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলেছেন, যে মায়াময় নারীর
বর্ণনা দিয়েছেন তা অনন্যসাধার।
0 Comments
Post a Comment