শত শত বছর পেরিয়ে গেছে তবুও মেলেনি ৩৯ বছরে মারা যাওয়া ক্লিওপেট্রার মৃত্যু রহস্য।  হলিউডের  বিভিন্ন সিনেমা আর ইংরেজি উপন্যাস গুলোতে দেওয়া হয়েছে মন ভোলানো সব ব্যাখ্যা।  যা নিয়ে আছে অনেক বিতর্ক। মিশরের সুন্দরী ও প্রভাবশালী এই রানীর মৃত্যু রহস্য নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনেক জল্পনা কল্পনা।  কিন্তু কোনটারই সঠিক কোন ব্যাখ্যা মেলে নি। 

রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রার মৃত্যু রহস্য
 ক্লিওপেট্রার মৃত্যু
ছবিঃ উইকিমিডিয়া 


ক্লিওপেট্রা মিশরের টলেমাইক সাম্রাজের শেষ সক্রিয় শাসক ছিলেন । নাটকীয় জীবন যাপনের সাথে সাথে তার মৃত্যুও ছিল বেশ রহস্যময়।  দিনে দিনে ঘোলাটে হয়েছে সেই রহস্য।  কথিত আছে গোখরা সাপের দংশনে ক্লিওপেট্রা ও তার দুই দাসী মারা যান।  ঘটনাটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য দেওয়া হয়েছে লোভনীয় ব্যাখ্যা।  রোমান রাজা চক্রান্ত করে রানীকে ঝুড়ি ভর্তি ডুমুর ফুল পাঠান।  আর ডুমুর ফুলের মধ্যেই লুকানো ছিলো বিষধর গোখরা।  অর্থাৎ রোমান রাজার উপহারই কাল হয়েছিল ক্লিওপেট্রার জীবনে।  ক্লিওপেট্রা সাপ অনেক পছন্দ করতেন,  প্রাসাদের মধ্যেও ছেড়ে রাখা হতো বিষমুক্ত সাপ।  সেই সুত্র ধরেই একটা মহলে বেশ প্রচলিত ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর কারণ সর্পের দংশন। কিন্তু এটা ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশর বিষয়ক গবেষকরা।  সর্প বিশেষজ্ঞদের সাথে মিলে এক সমন্বিত গবেষনায় বলা হয়েছে মিশরে যে ধরনের সাপ রয়েছে সে গুলো এত বড় যে ঝুড়ির মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে না বা ছোবল দেওয়ার আগে কারো চোখে পরবে না। তাছাড়া রানী ও তার দুই দাসী,  মোট তিন জনকে পর পর ছোবল দেওয়ার মত স্বভাব এসব সাপের নেই৷  ম্যানচেস্টার যাদুঘরের সর্পবিদ্যা বিশারদ এন্ড্রু গ্রে বলেন, গোখরা সাপ শুধু আকারেই বড় নয় পর পর তিনটি ছোবলে বিষ উগরে মরণ ছোবল দেওয়াও এই সাপের বৈশিষ্ট্য নয়৷ তাছাড়া গোখরা সাপের বিষের মৃত্যু বেশ দেরিতে হয়৷      

তাহলে রানী ক্লিওপেট্রা কি ভাবে মারা গেলেন? 

সেই সত্য আজও অজানা ৷  নিজের চোখে ক্লিওপেট্রার মৃত্যু দেখেছেন বা সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেন এমন কেউ কে পাওয়া যায়নি।  তবে কি অক্টাভিয়ান! প্রথম থেকেই সন্দেহের তীর অক্টাভিয়ানের দিকে। রাজনৈতিক বিভিন্ন স্বার্থে প্ররোচিত হয়েছিল অক্টাভিয়ান,  এমন কথা অজানা নয় ৷  অক্টাভিয়ান নিজ হাতে রানীকে হত্যা করেছেন এমন প্রমাণ না থাকলেও,  রাণীর হত্যার সুযোগ তিনিই তৈরি করে দিয়েছিলেন  এমন কথা বিভিন্ন মহলেই প্রচলিত ৷  ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করার পেছনে অক্টাভিয়ানের কিছু বিশেষ উদ্দেশ্য ছিলো বলে জানা যায়৷  সেই সব উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই  অক্টাভিয়ান ক্লিওপেট্রার বড় ছেলে সিজারিয়ানকে হত্যার নির্দেশ দেন ৷  সিজারিয়ান   কে হত্যা করতে পারলে মিশরের সিংহাসন তার আয়ত্তে অসবে। এছাড়াও একটা বিশেষ কারন ছিলো বলে ইতিহাসবিদেরা উল্লেখ করেছেন।  সিজারিয়ান ছিল রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার এবং ক্লিওপেট্রার অবৈধ প্রেমের ফল,  অপরদিকে অক্টাভিয়ান ছিলেন সিজারের পুত্র। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর পর মিশরে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে কেউ বেঁচে নেই বলে অক্টাভিয়ান মিশরকে রোমান সাম্রাজ্যের অংশ করে নেয়।

রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রার মৃত্যু রহস্য
ছবিঃ উইকিমিডিয়া

রয়েছে আরো মতবাদ-

প্রাচীন লেখক স্ট্রাবো  রানীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত মদ এবং ভেষজ মিশ্রণের সঙ্গে বিষাক্ত ঔষধ মিশিয়ে পান করাকে দায়ী করেন। তাহলে কি ক্লিওপেট্রা আত্মহত্যা করেছিলেন!  প্রচলিত আছে  অ্যান্টনির সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ক্লিওপেট্রার এই নিয়ে অক্টাভিয়ান অ্যান্টনিওর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে।  যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আলেকজান্দ্রিয়ায় চলে আসে অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রা।  শোকে তাপে আত্মহত্যা করেন অ্যান্টনি।  সেই রক্তাক্ত তরবারি দিয়েই ক্লিওপেট্রা আত্মহত্যা করেন৷  কিন্তু এ কথাও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়েছে৷  কারণ ২০১০ সালে জার্মান ইতিহাসবিদ ক্রিস্টোফার শেফার এক গবেষণায় বলেন, ক্লিওপেট্রার মৃত্যু হয়েছিল হেমলক, বিষাক্ত নীল ফুল এবং আফিমের মিশ্রণ গ্রহণ করার ফলে।  একজন টক্সিকোলজিস্টের সঙ্গে গবেষণা করেই এমন বিবৃতি দেন শেফার।
কোন বিশেষ ধরণের  বিষপানে ক্লিওপেট্রা  এবং তার দাসীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে বিশ্বাস করে কিছু লোক । সেক্ষেত্রে ক্লিওপেট্রা নিজেই কোন বিষধর সাপের বিষ গ্রহন করে মারা গেছেন বলে প্রকাশ করেছে কিছু সিনেমা।