মহাত্মা গান্ধী; আইন পড়া বাদ দিয়ে ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়েছিলেন যিনি
মহাত্মা গান্ধী    ছবিঃ উইকিমিডিয়া


"পৃথিবীটাকে যেভাবে বদলাতে চাও, ঠিক সেই পরিবর্তনটা তোমার নিজের মধ্যে আনো" এ রকম অনুপ্রেরণামুলক হাজারও বাণী দিয়ে গেছেন ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তি এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি জীবন উৎসর্গ করেছেন আর নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শনের জন্যে সমগ্র পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত হয়েছেন একজন মহান নেতা হিসেবে। পেয়েছেন ‘মহাত্মা’ উপাধি। সত্যাগ্রহ ও অহিংস আন্দোলনের মতো শক্তিশালী অস্ত্রের দ্বারা ব্রিটিশ রাজত্বের পতন করেছেন তিনি। তাইতো  ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের মনে ও দাগ কেটেছিলেন আত্মত্যাগী স্বাধীন ভারতের এই স্বপ্নদ্রষ্টা।

 
মহাত্মা গান্ধী; আইন পড়া বাদ দিয়ে ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়েছিলেন যিনি
আইনের ছাত্র গান্ধী   ছবিঃ উইকিমিডিয়া

গান্ধীর আইন পেশায় আসা

মহাত্মা গান্ধী প্রথম থেকেই চেয়েছিলেন ব্রিটিশ রাজ্য থেকে ভারতকে আলাদা করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে।  আর তার পরিবার চেয়েছিল তিনি ইংল্যান্ডে গিয়ে ব্যারিস্টার হয়ে আসুক যাতে ফিরে এসে সে তার বাবার মতো দেওয়ান হতে পারে। পরিবারের  ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গান্ধীজী ১৮৮৮ সালে ইংল্যান্ডের পথা পাড়ি জমান।  ব্যারিস্টার হিসাবে যোগ্যতা অর্জন করলেও এই কাজে তার অনেক বিড়ম্বনার সম্মুজ্ঝীন হতে হয়।  প্রথম অবস্থায় তিনি কোন মামলা পেতেন না তাই বড় ভাই তাকে মামলা দিতেন। এক পর্যায়ে আফ্রিকার এক ধনী ব্যবসায়ী জনাব আবদুল্লার প্রতিনিধিত্ব করতে তিনি আফ্রিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন ১৮৯৫ সালে  একজন শিক্ষিত ব্রিটিশ আইনজীবী হিসেবে ।

 আন্দোলনের সূচনা

আফ্রিকায় থাকাকালীন দক্ষিণ আফ্রিকায় নিপীড়িত ভারতীয় সম্প্রদায়ের নাগরিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গান্ধী প্রথম তাঁর অহিংস শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের মতাদর্শ প্রয়োগ করেন। ১৯১৫ সালের ৯ই জানুয়ারী গান্ধী ভারতে ফিরে আসেন। এইজন্য ওই দিনটিকে প্রবাসী ভারতীয় দিবস হিসাবে পালন করা হয়। গান্ধীর ভারতীয় রাজনীতি এবং ভারতীয় জনগণের সাথে পরিচিয় হয় গোপালকৃষ্ণ গোখলের মাধ্যমে, যিনি তৎকালীন একজন সম্মানিত কংগ্রেস নেতা ছিলেন।  ভারতে ফিরে আসার পরে তিনি কয়েকজন দুঃস্থ কৃষক এবং দিনমজুরকে সাথে নিয়ে বৈষম্যমূলক কর আদায় ব্যবস্থা এবং বহু বিস্তৃত বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। 

মহাত্মা গান্ধী; আইন পড়া বাদ দিয়ে ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়েছিলেন যিনি
ভারত ছাড় আন্দোলনে গান্ধী
ছবিঃ উইকিমিডিয়া


ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসার পর গান্ধী সমগ্র ভারতব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বর্ণ বৈষম্য দূরীকরণ, জাতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার শুরু করেন।তার এই প্রতিটি কাজই ছিল স্বরাজ অর্থাৎ ভারতকে বিদেশী শাসন থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে।  ১৯১৮ সালের বন্যায় খেদার কৃষকদের  ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ব্রিটিশ সরকার তাদের খাজনা মওকুফ করতে অস্বীকার করলে তিনি কৃষকদের ব্রিটিশ সরকারকে  সকল প্রকার শুল্ক দিতে নিষেধ করে দেন। এই আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ নিজ অবস্থানে নমনীয় হতে বাধ্য হয়। ১৯২০ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণের আগপর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে গান্ধী একধিক বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন যেগুলোকে সম্মিলিতভাবে সত্যাগ্রহ আন্দোলন বলা হয়। ১৯৩০ সালে তিনি ভারতীয়দের লবণ করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডান্ডি লবণ কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন, যা ১২ বছর পর  ইংরেজ শাসকদের প্রতি সরাসরি ভারত ছাড় আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। এসব কাজের জন্য তাকে  বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকবার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতে কারাবরণ করতে হয়।

মহাত্মা গান্ধী; আইন পড়া বাদ দিয়ে ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়েছিলেন যিনি
গান্ধী ও জওহরলাল নেহেরু
ছবিঃ উইকিমিডিয়া


গান্ধীর যতগুলো আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন তার মধ্যে  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন ছিল অসহযোগ আন্দোলন। গান্ধীর নীতি ছিল কোনো প্রকার সহিংসতায় না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া।  তাছাড়া  ব্রিটিশদের পণ্য বর্জন করা, খাদ্য-বস্ত্রে সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা, অর্থাৎ নিজের পায়ে দাঁড়ানো।  তিনি একপ্রকার বেসামরিক অনানুগত্যের আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে ব্রিটিশদের বিপাকে ফেলেছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে হিন্দু-মুসলিম একতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিলো , তাই তিনি খিলাফত আন্দোলনেও  সমান তালে আত্মনিয়োগ করেন।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গান্ধী শুরু করেন ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’। এবার আর কোনো পরোক্ষ নীতি অবলম্বন না করে সরাসরি ব্রিটিশদের ভারত ছাড়ার দাবী জানান তিনি।  ১৯৪৩ এর শেষের দিকে বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত ব্রিটিশরা ভারতকে স্বাধীনতা প্রদানের অঙ্গীকার করলে আন্দোলনটি থামে। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে গান্ধীর প্রবল আত্মত্যাগের বিনিময়ে  ভারত স্বাধীন হয়।
গান্ধী তার জীবনকে সত্য অনুসন্ধানের বৃহৎ উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে, এবং নিজের উপর নিরীক্ষা চালিয়ে সফল ব্যাক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন