সিকিম; যেভাবে ভারতের প্রদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে
সিকিম     ছবিঃ উইকিমিডিয়া

সিকিম!  নামটা বেশ পরিচিত। ছোট বেলায় বইয়ে পড়া হয়েছিল। আর এখন বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সমাধিক পরিচিত শহর। সিকিম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্য। আয়তনে ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম প্রদেশ। ছোট্ট এই জায়গাটির চারপাশ ঘিরে রয়েছে অন্যানা দেশের সীমান্ত।  সিকিমের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে  তিব্বত, পূর্বে ভুটান, পশ্চিমে নেপাল এবং দক্ষিণে ভারতের অপর একটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। সিকিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি।  সিকিমে  অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা ভারতের সর্বোচ্চ পর্বত শিখর। সিকিমের মনমুগ্ধকর সৌন্দর্যের মতই রহস্যময় সিকিমের ইতিহাস।
সিকিম শহরের ইতিহাস অনেক পুরাতন।   ১৭ শতকে নামগিয়াল রাজবংশ সিকিম রাজ্যটি প্রতিষ্ঠা করে।  সিকিম তখন  চোগিয়াল নামক একজন  বৌদ্ধ পুরোহিত রাজার শাসনে ছিল।  ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা যখন উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যায়, তখন সিকিম ভারতের সাথে  যুক্ত হতে ইচ্ছুক কিনা এ প্রশ্নে গণভোট হয়।   সেইসময়  ৭,০৯৬ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট দেশ, এই সিকিমের জনগণ  স্বাধীন ভাবে বাচতে চেয়েছিল তাই ভারতের এই প্রস্তাব তারা  প্রত্যাখ্যান করে।  কিন্তু  তিরিশ বছর পরেই জঘন্য রাজনৈতিক কর্মকান্ড আর  সিকিমের রাজার সরলতায় ১৯৭৫ সালে জনগণ সিকিমীয় রাজতন্ত্রকে দমন করতে সক্ষম হয় ১৯৭৫ সালে আবার গণভোট হয়।  তখন থেকেই সিকিম নতুন পরিচিতি পায় ভারতের ২২ তম রাজ্য হিসেবে।

সিকিম; যেভাবে ভারতের প্রদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে
লেন্দুপ দর্জি  ছবিঃ উইকিমিডিয়া


তবে সিকিমের পরাধীনতার ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত একটি  নাম হল কাজী লেন্দুপ দর্জি।  ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে লেন্দুপ দর্জি করেছিলেন জঘন্যতম কাজ।  লেন্দুপ দর্জির সাথে সিকিমের রাজপরিবারের   বংশগত শত্রুতা ছিল।  তাই তিনি কখনও চাইতেন না সিকিমে রাজতন্ত্র চলুক।  তাই সবসময়  রাজতন্ত্রের বিরোধীতা করতেন তিনি।  ১৯৪৫ এ  সিকিমে 'প্রজামন্ডল' নামক একটি দল গঠিত হয় আর লেন্দুপ দর্জি সেখানে সভাপতি নির্বাচিত হন।  পরবর্তীতে তিনি ৫ বছর 'সিকিম স্টেট কংগ্রেসের' সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  ১৯৬২ সালে সিকিমে তিনি কয়েকটি দলকে একীভূত করে এবং গঠন করেন 'সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস' যাদের মূল লক্ষ্য ছিল রাজতন্ত্রের অবসান করে গণতন্ত্রের প্রচলন করা।
সেটাই হল, 'সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস' যেটা চেয়েছিল।  এক পর্যায়ে এসে লেন্দুপ দর্জি সিকিমকে প্রদেশ করার জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টের কাছে আবেদন জানান।  যারফলে ১৪ এপ্রিল একটি নামমাত্র গণভোটের আয়োজন করা হয় ,  যেখানে সিকিমের জনগন সম্মতি জানায়।  এরপর  ২৬ এপ্রিল, ১৯৭৫ সিকিম কাগজ -কলমে ভারতের ২২তম প্রদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।  স্বাধীন সিকিম পরিচিতি পায়  ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম প্রদেশ হিসেবে

সিকিম; যেভাবে ভারতের প্রদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে
সিকিমের সীমানা     ছবিঃ উকিমিডিয়া

বর্তমানে  সিকিম ভারতের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রাজ্য।  হিমালয় অঞ্চলের রাজ্যগুলো আছে তার মধ্যে সিকিমে সাক্ষরতার হার এবং মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি।  তাছাড়া  সিকিম অত্যন্ত পরিষ্কার একটি বহুজাতিক এবং বহুভাষী রাজ্য।  সিকিমে অনেক ভাষার প্রচলন লক্ষ্য করা যায় তার মধ্যে নেপালি, সিকিমিজ, লেপচা, তামাং,  ইংরেজি অন্যতম।  সম্পুর্ণ পাহাড়ের উপর একটি শহর।  কিভাবে চলে এদের জীবিকাভাবলে অবাক লাগবে  সিকিম হচ্ছে ভারতের বৃহত্তম এলাচ উৎপাদক রাজ্য।  সিকিমের অর্থনীতি মূলত কৃষি ও পর্যটনের উপর নির্ভরশীল।  সিকিমের  কৃষি সম্পূর্ণভাবে জৈব পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল।   সমগ্র ভারতে এটি  সবচেয়ে পরিবেশগতভাবে সচেতন রাজ্য, তাই এখানে প্লাস্টিকের জলের বোতল এবং স্টাইরোফোম পণ্য সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ।