একবার ভেবে দেখুন ৪ হাজার বছরেরও আগে আমাদের এশিয়ার একটি শহরের মানুষ ফ্লাশযুক্ত টয়লেট ব্যবহার করত। আশ্চর্য হয়েছেন? এমন আরও চমকপ্রদ তথ্য অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেসব তথ্য।
প্রায় ৪ হাজার বছরেরও আগে সিন্ধু নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল এক মানব সভ্যতা। সিন্ধু নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল বলে এর নাম ছিল সিন্ধু সভ্যতা। এই সভ্যতার একটি শহর ছিল মহেঞ্জোদারো। এটি ছিল প্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সমসাময়িক। অন্য সবার থেকে মহেঞ্জোদারো ছিল নগর পরিকল্পনা ও পুরকৌশলে অনেক এগিয়ে। কিন্তু হঠাৎ করেই পতন ঘটে এই পরিকল্পিত ও সুসজ্জিত নগরীর। কী এমন ঘটেছিল সেখানে?

মহেঞ্জোদারো; এক আধুনিক নগরীর রহস্যময় বিলুপ্তি
ছবিঃ উইকিপিডিয়া


১৯২০ সালে পাকিস্থানে আবিষ্কার হওয়া হারাপ্পা ও মহেঞ্জোদারো ছিল ৪ হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার অস্তিত্বের নিরেট সাক্ষী। সিন্ধু সভ্যতা প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সমসাময়িক। ধারণা করা হয় সিন্ধু সভ্যতার প্রশাসনিক রাজধানী ছিল মহেঞ্জোদারো। সমসাময়িক অন্যান্য শহর হারাপ্পা, লোথাল এদের তুলনায় মহেঞ্জোদারো ছিল অনেক উন্নত, নগর পরিকল্পনা ও পুরকৌশল ছিল সবার সেরা। নাগরিকেরা এখানে ফ্লাশযুক্ত টয়লেট ব্যবহার করত, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ছিল চমৎকার। তারপরেও টিকে থাকেনি এই নগরী। কালের অতলে হঠাৎ করেই তলিয়ে যায়। কিন্তু কেন? এ নিয়ে আছে নানা মুনির নানা মত।


সেখানে হয়েছিল কি কোন গণহত্যা?

১৯৫০ এর দশকে মহেঞ্জোদারো খনন কারি স্যার মরটিময়ার হুইলার সেখানে একটি গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। তিনি সেখানে মোট ৪৪ টি কঙ্কাল পান। তিনি ধারণা করেন, গণহত্যায়ই শহর বাসির শেষ পরিণতি নির্ধারণ করে দেয়। নগরবাসী ইন্দো-আর্য দের দ্বারা আক্রান্ত হন। উত্তর-পশ্চিমের এই যাযাবর জাতি ভারতবর্ষে বসতি স্থাপন করে। কিন্তু হুইলারের বক্তব্যের বিপক্ষে জন্ম নেয় কিছু প্রশ্ন যা তাঁর মতামতকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেমন,
       কেন সেখানে কোন অস্ত্র পাওয়া যায় নি?
       কেনই বা উদ্ধার হওয়া কঙ্কালে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় নি।
গবেষকরা পরবর্তীতে মত দেন, মহেঞ্জোদারো ধ্বংসের পরে ইন্দো-আর্যরা এদেশে আসেন।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা মহেঞ্জোদারোর চরম পরিণতির জন্য সিন্ধু নদী হতে সৃষ্ট ভয়াবহ এক বন্যাকে দায়ী করেন। বন্যার কারনে কলেরাজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় যা রুপ নেয় মহামারীতে। মহেঞ্জোদারোর ভাগ্যে কি হয়েছিল এ নিয়ে দ্বিতীয় মতটি সর্বাধিক গৃহীত। কিছুদিন আগের এক গবেষণায় এই মত’টি অধিক গ্রহণযোগ্যতা পায়। সেই সময়ে, কয়েক শতাব্দী ধরে জীবনদায়িনী সিন্ধু নদী পূর্বদিকে অর্থাৎ মহেঞ্জোদারোর দিকে তাঁর গতি পরিবর্তন করতে থাকে। অবশেষে যার চূড়ান্ত রূপ লাভ করে এক ভয়াবহ প্লাবনের সৃষ্টি করে। বন্যা থেকে সৃষ্টি হয় কলেরা যার প্রকোপ মহামারীতে রূপ নেয় এবং ধ্বংস করে দেয় প্রাচীন কিন্তু আধুনিক নগরী মহেঞ্জোদারো।

মহেঞ্জোদারো; এক আধুনিক নগরীর রহস্যময় বিলুপ্তি
ছবিঃ উইকিমিডিয়া


এখানেই শেষ নয় অপেক্ষা করছে সব থেকে বিস্ময়কর মত’টি।

সবথেকে চমকপ্রদ এই মত’টি দেন গবেষক ডেভিড ডেভেনপোর্ট। তাঁর দেওয়া ধারণা বিদ্যুতের মত দ্রুত স্বীকৃতি পায়, যখন History Channel এর "Ancient Alien" সিরিজে তাঁর তত্ত্ব তুলে ধরা হয়। ডেভিড ডেভেনপোর্ট তাঁর জীবনের বার বছর ব্যায় করেছেন মহেঞ্জোদারোর উপর লিখিত প্রাচীন ভারতীয় লিপির উপরে গবেষণা করে। মহেঞ্জোদারোর ধ্বংস-স্তুপ থেকে প্রাপ্ত বস্তুর তাপমাত্রা ১৫০০ ডিগ্রিতে বৃদ্ধি পায় এবং হঠাৎ করেই যেটা শীতল হয়ে যায়। এই চমকপ্রদ তথ্যটি তিনি প্রকাশ করেন তাঁর বই “Atomic Destruction in 2000 BC” তে। তিনি ৫০ গজ চওড়া এক কেন্দ্রস্থলের কথা উল্লেখ করেন যেখান থেকে প্রাপ্ত ইট গুলোর এক দিকে গলানো ও স্ফটিকযুক্ত, যা স্পষ্টতই কোন বিস্ফোরণের ইঙ্গিত দেয়। তিনি উল্লেখ করেছেন মহেঞ্জোদারোতে যা পাওয়া গিয়ছে তা হিরোশিমা ও নাগাসকির সাথে মিল আছে।
যেহেতু মহেঞ্জোদারোতে কোন আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ঘটেনি তাই তিনি দাবি করেন নগরটিতে পারমাণবিক বোমার মত শক্তিশালী কোন প্রাচীন অস্ত্র দ্বারা আক্রমণ করা হয়।


এখানেই শেষ নয়। রয়েছে আরও রহস্য।

শহরটি এত পরিকল্পিত ও উন্নত হলেও সেখানে কেনো মৃতদেহের কোন কবর পাওয়া যায়নি? কেন তাদেরকে গরতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল?
ধারণা করা হয় মহেঞ্জোদারোতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসতি ছিল।  কিন্তু কেন মাত্র ৪৪ জনের লাশ পাওয়া গিয়েছি্ল?
এই প্রশ্নের উত্তর হয়তবা কোনদিনও মিলবে না আবার হয়তবা নতুন করে ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার হলে মিলবে।