"যার হাতে কিছুই নেই, তার হাতেও সময় আছে। এটাই আসলে সবচেয়ে বড় সম্পদ” ব্যালটাজার গার্সিয়ান কথাটি বলে মানুষকে বোঝাতে চেয়েছেন সময়ের মুল্যের কথা, বোঝাতে চেয়েছে সময়ের সঠিক ব্যবহারের কথা। সময়ের যথাপোযুক্ত ব্যবহারই বয়ে আনতে পারে পর্যাপ্ত সফলতা। সুতরাং যে ব্যাক্তি জীবনে সফল হতে চান, সে জেনে বুঝে কখনো ১ মিনিট সময় ও নষ্ট করবে না। একজন ভালো ছাত্র হতে চাইলে, সময়ের মূল্য দিতে হবে। চাকরিতে বা ব্যবসায়ে সফল হতে চাইলেও সময়ের মূল্য দেয়ার বিকল্প নেই। সময়ের পড়া সময়ে করা, সময়ের কাজ সময়ে করা – ছাত্র বা কর্মজীবনে সফল হওয়ার সবচেয়ে বড় শর্ত। সময়কে জানার জন্য, উপলব্ধি করার জন্য আর সময়ের সঠিক মুল্যায়নের জন্য সময় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে, যে ক্ষেত্রে সহয়তা করতে পারে ঘড়ি।
সূর্য ঘড়ি |
‘সূর্যঘড়ি’ কথাটির সাথে এ প্রজন্ম মোটেও পরিচিত না । সময় শুধু আজ না, শত শত বছর আগেই সময় মানুষকে জড়িয়ে নিয়েছে তার সাথে। সুদূর অতীতে কোনোরকম মিনিট, সেকেন্ড বা ঘণ্টার কাঁটা ছাড়াই ঘড়ির প্রচলন ছিল, যার নাম ছিল সুর্যঘড়ি। জানা যায়, মিসরীয়রাই প্রথম প্রকৃতিনির্ভর সূর্যঘড়ির প্রচলন করে। পরবর্তীতে ইউরোপীয়রা ১৪ শতাব্দীতে যান্ত্রিক ঘড়ির রূপ দেয়। তারপর ক্রমান্নয়ে আবিষ্কৃত হয় ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ডের কাঁটাযুক্ত ঘড়ির নানা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নকশা। ঘড়িতে যুক্ত হয় নানা ধরনের বৈচিত্র্য। একপর্যায়ে ঘড়ি নিয়ে অনেক অজানা গল্পও ভেষে বেড়াতে থাকে । সেই সব গল্পের মধ্যে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে ঘড়ি সংবলিত এলিজাবেথ টাওয়ার।
এলিজাবেথ টাওয়ার
এলিজাবেথ টাওয়ার |
এলিজাবেথ টাওয়ারের অবস্থান লন্ডনের ওয়েস্ট মিনস্টার শহরে । এই টাওয়ারটির বিশেষ অাকর্ষণ হল এর বিগ বেন। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শব্দ করা চতুর্মুখী ঘড়ি।
১৮৫৯ সালের ১১ জুলাই টাওয়ারটি উদ্বোধন করা হয়। টাওয়ারটি ৩১৫ ফুট উঁচু এই টাওয়ারটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল মোট ১৩ বছর। এই টাওয়ারটিতে মোট পাঁচটি ঘণ্টা রয়েছে । সব থেকে বড় ঘণ্টা বিগ বেনের ওজন সাড়ে ১৩ টন। আর যে হাতুড়ি দিয়ে বিগ বেনে আঘাত করা হয় সেটির ওজন ২০০ কেজি। যখনই ঘন্টায় অাঘাত করা হয় এর শব্দে সবার কাছে সময়ের বার্তা পৌছে যায়। এই বিশেষ টাওয়ারটির নকশা করেছিলেন অগাস্টাস পুগিন। বিগ বেন ছাড়া আর যে চারটি ঘণ্টা আছে টাওয়ারে, সেগুলো ১৫ মিনিট পর পর টুং টাং আওয়াজ তোলে। আগে টাওয়ারটিকে সাধারণ ভাবে ক্লক টাওয়ার নামেই ডাকা হতো । পরে ২০১২ সালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের হীরক জয়ন্তী উদ্যাপনের সময় এর নাম রাখা হয় এলিজাবেথ টাওয়ার।
বিগ বেনের এই ঘড়িটির নামকরনেও রয়েছে বেশ বিচিত্র গল্প। বিগ বেন লন্ডনের অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় স্থাপনা। জনশ্রুতি অাছে, স্যার বেনজামিন হলের নাম থেকে হয়েছে বিগ বেন। অাবার অনেকে বলেন, এই টাওয়ারে যে ঘড়ি রয়েছে তার নকশা যিনি করেছেন তিনি পেশাদার কেউ ছিল না। এবং তার নাম ছিল এডমন্ড বেকেট ডেনিসন। অার তার নাম অনুসারে এর নাম দেওয়া হয় বিগ বেন। তবে এ ব্যাপারে কোন যথাযোগ্য প্রমাণ নেই। এডমন্ড বেকেট ডেনিসন পেশায় ছিলেন একজন উকিল। ঘড়ি তৈরি তার শখ ছিল। বিগ বেন তার শখেরই ফসল। বিগ বেনের শুধুমাত্র ঘড়িটির ওজনই ৫.০৮ টন। ঘড়িটির সংখ্যাগুলো ২ ফুট এবং মিনিটের কাঁটাটি ১ ফুট লম্বা।
তবে বিগ বেন এখন বন্ধ অাছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চার বছর ঘড়ি বন্ধ থাকার কথা সংস্কারের কাজের জন্য। বলা হয়েছে এই চার বছর আর ‘বিগ বেন’-এর ঘণ্টাধ্বনি বাজবে না। এর আগেও সংস্কার কাজের জন্য ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এবং ২০০৭ সালে সাময়িকভাবে কিছুদিনের জন্য বিগ বেন বন্ধ ছিল। এই সংস্কারের কাজের জন্য ছাড়া ১৫৭ বছর ধরে প্রতি ঘণ্টায় বিগ বেন এর ঘণ্টাধ্বনি বাজছিল।
পৃথিবীর সর্বাধিক পাঁচটি জনপ্রিয় সেলফি স্পটের মধ্যে একটি । লন্ডনে ঘুরতে যাওয়া অধিকাংশ পর্যটকটই বিগ বেন দেখতে যায়। যুক্তরাজ্যের নববর্ষ উদ্যাপনেরও কেন্দ্রস্থল হিসেবেও এই টাওয়ার বেশ জনপ্রিয়। নববর্ষ উদযাপনের প্রাক্কালে ক্লক টাওয়ার সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। যুক্তরাজ্যের রেডিও এবং টেলিভিশন সম্প্রচার কেন্দ্রগুলোর সকলই একযোগে নতুন বছরকে বরণ করতে বিগ বেনের ঐক্যসুরকে শুভেচ্ছা বার্তারূপে শ্রোতা-দর্শকদের প্রদান করে থাকে। বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং নেশ কিছু সিনেমায় এই টাওয়ারের সৌন্দর্যের বর্ননা করা হয়েছে।
0 Comments
Post a Comment