রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন! একটি খুবই অপরিচিত নাম। কে এই ব্যাক্তি? কিন্তু হলফ করে বলতে পারি এনাকে দেখে আপনি একবারের জন্য হলেও হেসেছেন। যার পেশাই মানুষকে হাসানো। রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন হচ্ছেন একজন ব্রিটিশ লেখক, অভিনেতা এবং কমেডিয়ান। কিন্তু এই নামে আমরে তাকে চিনি না। তিনি সুপরিচিত মিস্টার বিন নামেই। আমরা তাকে চিনি সিটকম্ ব্লাকাডার এবং নট দ্য নাইন ও'ক্লক নিউস ব্যঙ্গরচনা স্কেচ্ শো জন্য। স্যুট পরিহিত হাস্যকর চেহারার এই লোকটি, যাকে সরাসরি কখনো কথা বলতে দেখা যায়না, হাত পা নাড়িয়ে বা মুখ বাকিয়ে সবার সাথে দুষ্টুমি করছে অথবা বাচ্চাদের মত একের পর এক ছেলে মানুষি করেই চলেছেন। ভাবলেও অবাক লাগে এটা সম্পুর্ণই তার অভিনয়। বাস্তবিক জীবনে তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মাস্টার্স করেছেছেন তিনি।
ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নিলেন কেন রো?
রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন এর ডাক নাম রো। ১৯৫৫ সালের ৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের ডুরহাম বিভাগের কনসেটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা এরিক অ্যাটকিনসন একজন কৃষক এবং একটি কোম্পানির পরিচালক ছিলেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিল রো। প্রাথমিক শিক্ষাজীবন ডারহামের ক্যাথেড্রাল স্কুলেই শুরু করেন রো। ছোটবেলা থেকেই বেশ হাসিখুশি, মনোযোগী এবং সল্পভাষী একজন মানুষ ছিলেন রো । এই স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই অভিনয়ের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তার স্কুলেই একটি ফিল্ম সোসাইটি ছিল। সেই ফিল্ম সোসাইটির প্রধান বিষয় ছিল হাসির ও শিশুতোষ বিষয়ক বিভিন্ন সিনেমা দেখানো। স্কুলে যখন চার্লি চ্যাপলিন সহ অন্যান্য কমেডি অভিনেতাদের তিনি অনুকরন করতেন এবং নিজের অজান্তেই তাদের অভিনয় গুলো নকল করতে শুরু করেন। একটা সময় মঞ্চের ব্যাকস্টেজে অভিনয় করতে শুরু করেন। এখান থেকে বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনি কিন্তু অভিনেতা কিংবা কমেডিয়ান হওয়া কে প্রাধান্য দিতে পারেননি। কেননা তিনি ছিলেন পড়াশোনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সিরিয়াস। তাই পড়াশুনাটাকেই সবসময় প্রাধান্য দিয়েছেন।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে নাট্যকার ও গীতিনাট্য অভিনেতা রিচার্ড কার্টিসের সাথে পরিচয় হয় রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসনের । রিচার্ড সাধারণত কমেডি চরিত্রে অভিনয় করতেন। রিচার্ড কার্টিসের সঙ্গে একসাথে রোয়ান অ্যাটকিনসন বিবিসি রেডিও থ্রিতে দ্য অ্যাটকিনসন পিপল নামের একটি স্যাটারিক্যাল ইন্টারভিউধর্মী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতেন। এর মধ্যে থেকেই তার মিডিয়া জীবনের সুচনা হয়। সেসময়ে একটি কমেডি গ্রুপেও যোগদেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তার। সেখানে তার কথার তোতলামির কারণে বেশ সমস্যায় পরতে হয়েছিল তাকে।
তখন থেকে অভিনয়ের প্রতি তার তীব্র মোহ জন্মে। অভিনয়ের দিকেই ছুটে চলা শুরু করেন । কিন্তু এখানে এসেও তিনি সেই একই সমস্যার মুখোমুখি হন, তোতলামির জন্য অনেকগুলো টিভি শো তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু নিজের উপর আত্মবিশ্বাস হারাননি কখনো । একটা পর্যায়ে তোতলামো সমস্যার সমাধান তিনি নিজেই করেন। কারন তিনে বুঝতে পারেন তিনি যখন নিজের মতো করে কথা বলে কেবল তখনই তার তোতলামো আসে, কিন্তু অন্য কারো ক্যারেক্টারে অভিনয় করতে গেলে অনর্গল কথা বলতে পারে কোন প্রকার তোতলামো ছাড়াই।
ব্যর্থতার একটা গন্ডি পার করে নিজেকে আবার উপস্থাপনের ইচ্ছাই নতুন করে পথ চলা শুরু করেন রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন। কিন্তু সমস্যা পিছু ছাড়ছে না। তার চেহারা সুন্দর না এবং নায়কের মতো শরীর না থাকায় নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন বা তিনি। ব্যাপারটা বেশ অপমানজনক মনে করেন তিনি। তাদের এই অবহেলাকে ভুল প্রমাণ জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তিনি। আর এক পর্যায়ে এসে সফলও হয়েছেন তিনি। ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত জেমস বন্ড সিরিজের ছবি ‘নেভার সে নেভার এগিন’। এই মুভিটিতে রোয়ান অ্যাটকিনসন গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপরের বছর রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনয় করেন ‘ডেড অন টাইম’মুভিটিতে। এটিতে রোয়ান লিডিং চরিত্রেই অভিনয় করেছিলেন।
রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন থেকে মিস্টার বিন:
১৯৯০ সালে রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন ‘মিস্টার বিন’ হিসেবে টেলিভিশন পর্দায় হাজির হন । আসলে মিস্টার বিন ১৪ পর্বের একটি হাস্যরসাত্মক ব্রিটিশ টিভি ধারাবাহিক। আইটিভি নামক একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এর প্রথম পর্বটি প্রচারিত হয় ১৯৯০ সালের প্রথম দিনটিতে। যার শেষ পর্বটির নাম ছিল 'হেয়ার বাই মিস্টার বিন অব লন্ডন'। প্রথমে শুধু টিভি সিরিয়াল থাকলেও মি. বিন নিয়ে সিনেমা এমনকি কার্টুনও নির্মিত হয়েছে এবং মি. বিন প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। টানা বিশ বছর এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। শুরুর দিকে মি. বিন ছাড়াও এ সময় তিনি দ্যা ব্ল্যাক অ্যাডার এবং ফানি বিজনেসসহ বেশ কয়েকটি তুমুল জনপ্রিয় টিভি সিরিজে নিয়মিত অভিনয় করেন। কিন্তু সবগুলোকে ছাড়িয়ে যায় ‘মিস্টার বিন’। এমনকি নিজের নামটাকেও হারাতে হয় রোয়ান অ্যাটকিনসনকে। তারই তালগোল পাকানো কাণ্ড-কারখানায় ভরপুর এ ব্রিটিশ কমেডি সিরিজের লেখক হলেন রবিন ড্রিসকল এবং রোয়ান অ্যাটকিনসন নিজেই।
তার লেখা 'নট দ্যা নাইট’ ও ‘ক্লোক নিউজ' বইটি ব্রিটিশ একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও আন্তর্জাতিক এমি অ্যাওয়ার্ডও লআভ করে । পরবর্তীতে এই বই থেকে টিভি কমিক অনুষ্ঠান তৈরি করা হয় এবং তাতে অভিনয় করেন স্বয়ং তিনি। এই সিরিজে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৮০ সালের সেরা কমেডিয়ান হিসেবে নির্বাচিত হন রোয়ান অ্যাটকিনসন যিনি আমাদের সকলের প্রিয় মিস্টার বিন।
0 Comments
Post a Comment