আপনারা সিনেমাপ্রেমী হয়ে থাকলে নিশ্চয় দ্যা লায়ন কিং, ইনসেপশন, জোকার সিনেমা গুলো দেখে থাকবেন। আচ্ছা এগুলো বাদ দিলাম পাইরেটস অব দ্যা ক্যারিবিয়ান সিরিজ কিংবা ইন্টারেস্টেলার সিনেমা নিশ্চয় দেখেছেন? এগুলো না দেখে থাকলে আপনি আসলে সিনেমা প্রেমীই নন।

মনে আছে ইন্টারেস্টেলারের সেই ডকিং দৃশ্যের কথা? থাকবে নাইবা কেন? অমন টান টান উত্তেজনা কখনও ভোলা যায়? সেই দৃশ্যটি আবার একটু দেখুন, একবার সাউন্ড অফ করে আরেকবার সাউন্ড অন করে। কী? সাউন্ড অফ করে দেখলে অমন উত্তেজনা আর টের পাননা তাইনা?

ঠিকই ধরেছেন, আমি সঙ্গীতের (আবহ) কথাই বলছি। একটি সিনেমা, নাটক বা হালের ওয়েব সিরিজই হোক না কেন সঙ্গীত ছাড়া ঠিক যেন পূর্ণতা পায় না।


হ্যান্স জিমার- সিনেমা জগতের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মহান সুরকার

হ্যান্স জিমার   ছবিঃ উইকিপিডিয়া


আজকে কথা বলব এমনই এক সঙ্গীত স্রষ্টার কথা। যিনি দেড়শ’র ও বেশি সিনেমার সঙ্গীত সৃষ্টি করেছেন। তাঁর একেকটা সঙ্গীতই ছুয়ে গেছে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়। তিনি আর কেউ নন জার্মান সুর স্রষ্টা হ্যান্স জিমার। তিনি প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেড়শ’ইয়ের বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন। ১৯৯৪ সালে তিনি "দ্যা লায়ন কিং" সিনেমার জন্য অস্কার পান। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন দু'টো গোল্ডেন গ্লোব, চারটে গ্র্যামি এওয়ার্ড। বলা হয়ে থাকে হ্যান্স জিমার আধুনিক সিনেমার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া একজন সঙ্গীত পরিচালক। এত কিছুর পরেও তিনি থেকে গেছেন খ্যাতির আড়ালে। তাঁর  সঙ্গীত শুনে বোধহয় হুমায়ুন আহমেদ তাঁর কল্পকাহিনী "মানবী" বইয়ে মহান চন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী আহানকে  একেছিলেন যার অধিকাংশ সুরই ছিল অন্য ভুবনের। 

 

জিমারের সঙ্গীতে আগমনঃ

জিমার সঙ্গীতের সাথে পথ চলা শুরু করে ছোট বেলা থেকেই। ১৯৫৭ সালের ১২ ই সেপ্টেম্বর জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট শহরে জন্মগ্রহণ করেন হ্যান্স জিমার। ছোট বেলাতেই প্রিয় বাবাকে হারান জিমার। বাবাকে হারানোর পর সঙ্গিতকেই পরম বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন ছোট্ট জিমার। সঙ্গীতই হয়ে ওঠে জিমারের একমাত্র সঙ্গী। ছোট থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে নিজের পছন্দ মত সঙ্গীত চর্চা শুরু করেন জিমার। এখনও পর্যন্ত জিমার নির্দিষ্ট কোনো সঙ্গীত যন্ত্র ব্যবহার করেন না। যার কারনে তিনি হয়ে উঠলেন অন্যদের থেকে আলাদা, যুবকদের কাছে পেলেন বেশি গ্রহণযোগ্যতা। একজন জার্মান যুবকের পক্ষে হলিউডে সফল হওয়া খুব কষ্টকর বিষয় হলেও তিনি তা করে দেখিয়েছেন অবলীলায়।

হ্যান্স জিমার- সিনেমা জগতের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মহান সুরকার

ছবিঃ উইকিমিডিয়া


চলুন দেখে আসি জিমারের কিছু অমর সৃষ্টিঃ  


রেইন ম্যান (১৯৮৮)

জিমারের ক্যারিয়ারের একটি টার্নিং পয়েন্ট রেইন ম্যান। তিনি এই সিনেমার সুর সৃষ্টি করেছিলেন, যা বক্স অফিসে একটি সফল সিনেমা হিসাবে স্বীকৃতি পায় এবং প্রথম অস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

দ্য লায়ন কিং (১৯৯৪)

"দ্য লায়ন কিং" সিনেমার জন্য তিনি তাঁর প্রথম এবং একমাত্র অস্কারটি পান। এই সিনেমার সঙ্গীতেই তিনি বাচ্চাদের সাথে সাথে তাদের পিতামাতাকেও আবেগের সাথে কাঁদিয়েছিলেন।

 

ইনসেপশন (২০১০)

বিখ্যাত পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলানের জনপ্রিয় সিনেমা ইনসেপশন। এই সিনেমাটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন জার্মান সুরকার হ্যান্স জিমার।

          

ইন্টারেস্টেলার (২০১৪)

হ্যান্স জিমার ক্রিস্টোফার নোলানের সিনেমার জন্য তাঁর সেরা সঙ্গীত রচনা করেছিলেন এই সিনেমায়। কুপার যখন মহাশূন্যে তাদের স্পেস শিপ ডকিংয়ের চেষ্টা করছিলেন তখন যে আবহ সঙ্গীত বেজেছিল তা কোনো সিনেমাপ্রেমি কখনও ভুলতে পারবে না। তাঁর সেই সঙ্গীত ছিল মুগ্ধকর, পরিস্থতির সাথে ছিল মানানসই।

এছাড়াও তিনি পাইরেটস অব দ্যা ক্যারিবিয়ান, ব্যাটম্যান, জোকারের এর কালজয়ী সিনেমাতে সুর দিয়েছেন। নিজের সঙ্গীত জগতকে করেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।