নিশ্চয়ই হুমায়ূন আহমেদের ফিহা সমীকরণ বইটা পড়েছেন। পড়েননি? তাহলে নিশ্চয়ই কালের শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদ আইজ্যাক নিউটনের নাম শুনেছেন? এই নাম তো অবশ্যই শুনবেন। এই আইজ্যাক নিউটনেরই যেন কল্পিত রুপ ফিহা সমীকরণের মুখ্য চরিত্র মহামতি ফিহা। যার সম্পর্কে বলা হয়েছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পদার্থবিদ তিনি। হবেই না বা কেন? তিনি তো সময় সমীকরনের সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন, রক্ষা করেছিলেন পৃথিবীকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে। কালে কালে পৃথিবীতে এমনই প্রখর মেধাসম্পন্ন গণিতবিদ, পদার্থবিদ দের আগমন ঘটেছে এই নশ্বর পৃথিবীতে। যাদের অবদানে এই সুন্দর পৃথিবী হয়ে উঠেছে আরও সুন্দর আরও মানবীয়।
জর্জ ড্যান্টজিগ |
না! আজ আমি ফিহা অথবা নিউটনের কথা বলব না। তবে তাদেরই মত প্রখর মেধাসম্পন্ন অন্য আরেকজনের কথা বলব। যিনি একজন বিখ্যাত আঙ্কিক। যিনি হোমওয়ার্ক ভেবে সমাধান করে ফেলেছিলেন বহুকাল ধরেই অমীমাংসিত এক গাণিতিক সমস্যা।
চিনতে পেরেছেন কার কথা বলছি? না চিনলেও ক্ষতি নেই, তিনি অলক্ষেই থাকতে পছন্দ করেন, থেকেও গেছেন সারাজীবন অলক্ষে। হ্যা! আমি বলছি আমেরিকান গণিতবিদ জর্জ ড্যান্টজিগের কথা।
জর্জ ড্যান্টজিগ তখন পড়ালেখা করেন ইউসি বার্কলিতে। প্রফেসর জেরজি নেইমানের তত্ত্বাবধানে স্নাতকের ছাত্র তখন তিনি। তার বিষয় পরিসংখ্যান। এমন সময় একদিন ড্যান্টজিগ ক্লাসে পৌছালেন দেরিতে। প্রোফেসর সেদিন ক্লাসের বোর্ডে পরিসংখ্যানের দুটো অমীমাংসিত সমস্যা(অঙ্ক) লিখেছিলেন উদাহরণ হিসাবে। ড্যান্টজিগ যখন ক্লাসে পৌছালেন ততক্ষণে ক্লাস শেষ। দেখলেন বোর্ডে পরিসংখ্যানের দুটো সমস্যা দেওয়া আছে। ওটা দেখে ড্যান্টজিগ ভাবল এগুলো বোধহয় প্রফেসর হোমওয়ার্ক দিয়েছেন। এই ভেবে সমস্যা দুটো তিনি টুকে নিলেন খাতায়৷ এর পর কয়েকদিন খোজ নেই ড্যান্টজিগের। এই দুটো সমস্যা ছিল পরিসংখ্যানের বিখ্যাত সিমপ্লেক্স এলগরিদম এবং লিনিয়ার প্রোগ্রামিং।
কয়েকদিন পর প্রফেসরের নিকট ক্ষমা চাইলেন হোমওয়ার্ক দেরি করে জমা দেওয়ার জন্য। বললেন এগুলো সাধারণ অঙ্কের থেকে একটু কঠিন সেজন্য এত দেরি। প্রফেসর নেইমান সমাধান গুলো টেবিলে রেখে যেতে বললেন৷
এর পর সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে চলল পরের ছয় সপ্তাহ। জর্জ তার থিসিস নিয়েও চিন্ততি। কোনোভাবেই তার থিসিস পেপারের কাজ অগ্রসর হচৃছে না। প্রায় ছয় সপ্তাহ পর এজ রবিবারের সুন্দর সকালের কথা, ড্যান্টজিগ তখনও ঘুমিয়ে। আনুমানিক ৮ টার দিকে বেজে উঠল ডোর বেল। এত সকালে কে এল মনে মনে বিরক্ত ড্যান্টজিগ। অনিচ্ছা স্বত্তেও উঠে গিয়ে খুলে দিল দরজা। দেখলেন প্রফেসর নেইমান দরজায় দাড়িয়ে আছেন, হাতে কয়েকগোছা কাগজ। নেইমান উত্তেজিত হয়ে বললেন, আমি শুধু তোমার থিসিসের সূচনা লিখেছি। এগুলো প্রকাশের জন্য পাঠানোর আগে তোমার একবার দেখা উচিত। ড্যান্টজিগতো অবাক প্রফেসর বলে কি? আমার থিসিস? কিভাবে হলো?
সিমপ্লেক্স এলগোরিদমের প্রতিকী ছবি |
তখন প্রফেসর নেইমান বললেন, তুমি হোমওয়ার্ক ভেবে যে সমস্যা দুটির সমাধান করেছ সেই দুটো সমস্যা আসলে বহু বছর ধরে অমীমাংসিত থাকা পরিসংখ্যানের দুটি বিখ্যাত সমস্যা। এবং এই দুটি সমধানই তোমার থিসিস হিসাবে গন্য করা হবে।
অসাধারণ প্রতিভাবান এই গণিতবিদ ৮ নভেম্বর ১৯১৪ সালে আমেরিকার পোর্টল্যান্ডে জন্মগ্রহন করেন। তার পুরো নাম জর্জ বার্নার্ড ড্যান্টজিগ। সমস্যা দুটো সমাধানের পর দুনিয়া জুড়ে তিনি পরিচিতি পেলেন ফাদার অব লিনিয়ার প্রোগ্রামিং নামে। ছাত্রজীবনে তিনি ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়ার মত বিদ্যাপিটে লেখা পড়া করেছেন। গণিত শাস্ত্রে তার অবদান অসামান্য। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি পেয়েছেন অনেক পুরস্কারও।
১৯৭৫ সালে তিনি পান জন ভন নিউম্যান থিওরি প্রাইজ একই বছর তিনি ন্যাশনাল মেডেল অব সাইন্স পুরস্কারও পান৷ এই মহান গণিতবিদ ২০০৫ সালের ১৩ ই মে অন্তিম যাত্রার উদ্দেশ্যে পরপারে পাড়ি জমান।
এধরনের প্রতিভরাই কালে কালে আমাদের কবি, সাহিত্যিকের কলমের মাধ্যমে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকেন কখনও বা মহামতি ফিহা নামে আবার কখনও বা প্রফেসর শঙ্কু, শার্লক হোমস নমে। এদের ব্রতই যেন মানব সেবা করা, মানুষের বিপদে সাহায্য করা। এদের অবদানের কারনেই আমাদের জীবন হয়ে ওঠে সহজ ও স্বাভাবিক।
0 Comments
Post a Comment