শিতের রাত। চারদিকে কনকনে ঠান্ডা বাতাস বইছে। ধু ধু বরফের আস্তর চারিদকে। ক্লান্ত পশু শিকারি জো লেবেল, ঠান্ডা বরফের মধ্য দিয়ে একা হেঁটে চলেছে। গন্তব্য ইনুইট গ্রাম। সামনেই আনজিকুনি হ্রদের পাড়েই তাঁর পূর্ব পরিচিত গ্রামটির অবস্থান। আগেও পশু শিকারে এসেছিল লেবেল, এসে আশ্রয় নিয়েছল হ্রদ পাড়ের গ্রামটিতে, সে কারনেই গ্রামবাসীদের সাথে বেশ পরিচয় তাঁর। এইতো আরেকটু গেলেই পড়বে ইনুইট গ্রাম তারপর এই হতচ্ছড়া ঠান্ডা থেকে মুক্তি, মনে মনে ভাবল শিকারি। কিন্তু গ্রামে যেয়েই মুখোমুখি হলো তাঁর জীবনের সব থেকে বড় রহস্যের।
ইনুইট গ্রাম
তাঁর পূর্ব পরিচিত জনবহুল গ্রামটি একেবারেই ফাঁকা। সেখানে নেই কোনো প্রানের চিহ্ন। অথচ দেখলে বোঝা যায় ঘন্টা দুয়েক আগেও সেখানে ছিল প্রানের চিহ্ন। এখনও কয়েক জায়গাই আগুন থেকে কুণ্ডলী পাকিয়ে উড়ছে ধোঁয়া, রান্না ঘরে পড়ে রয়েছে রাতের আহারের অবশিষ্ট অংশ। লেবেলের মনে ভর করল অদ্ভুত এক ভয়। সে গ্রামবাসীদের কেবিন পরীক্ষা করে দেখল জায়গা মতই আছে সকলের নিত্যদিনের ব্যবহৃত বন্দুক, অথচ গ্রামবাসীরা তাদের বন্দুক ছাড়া কোথাও যায় না। দড়িতে ঝুলে আছে সকলের জামাকাপড়, যেন একটু আগেই সেগুলো রাখা হয়েছে। গ্রামের সবকিছুই ঠিকঠাক আছে, শুধু নেই মানুষ। ঠিক যেন সবাই কর্পূরের মত উবে গেছে।
আনজিকুনি হ্রদ |
ভীত লেবেল নিকটের টেলিগ্রাম অফিসে গেলেন পুলিশকে জানাতে। লেবেলের ডাকে সাড়া দিয়ে খুব দ্রুত চলে এলো মাউন্টেইন পুলিশের একটি দল। এসে শুরু করল গ্রাম তল্লাশি। তারাও লেবেলের মত অবাক।
অবাক হওয়ার এখনও বাকি সামনে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে সব থেকে বড় চমক। খুজতে খুজতে তারা হঠাৎ বুঝতে পারল গ্রাম থেকে শুধু জীবিত মানুষ নয়, মৃত লাশ গুলোও হারিয়ে গেছে কবর থেকে। এই ঘটনা তাদেরকে করে তুলল আরও ভীত। এখানেই শেষ নয়, তারা কিছু দূরে আবিষ্কার করল ৭ টি কুকুর বরফের নিচে চাঁপা পড়ে আছে মৃত অবস্থায়।
কি ভাবছেন এসব কি পড়ছি? এ নিশ্চয় কোনো ভৌতিক সিনেমার কাহিনী অথবা কোনো গল্প উপন্যাসের প্লট। না, এটা সত্য ঘটনা। ঘটনাটি ঘঠেছিল ১৯৩০ সালে, কানাডায়। আনজিকুনি হ্রদ কানাডার নুনাভাট প্রদেশে অবস্থিত, যাকে বলা হয় বিশ্বের সবথেকে উত্তরঞ্চালে অবস্থিত।
জো লেবেল |
ঠিক কি ঘঠেছিল গ্রামবাসীদের সাথে?
ঠিক কি ঘঠেছিল হ্রদ পাড়ের অভাগা গ্রামবাসীদের সাথে তা আজও অজানা। হয়ত কোনদিনও জানা যাবে না আবার হয়তো ইন্মেচিত হবে সেই রহস্য। তবে সেই সময়কার তদন্তে ইনুইটের পাশের গ্রামবাসীরা বলেছিল তারা ইনুইটের আকাশে রাতের বেলা একটা নীল আলো জ্বলতে দেখেছিল, যেটা ধীরে ধীরে আকাশের সাথে মিশে গিয়েছিল। এ থেকে অনেক থিওরি দাড় করানো গেলেও যুক্তি সঙ্গত কোনো ব্যাখ্যা মেলেনো যায় না।
ইনুইটের এই ঘটনা নিয়ে রয়েছে পক্ষে বিপক্ষে অনেক মতামত ও প্রমান। কেউ কেউ আবার দাবি করেন জো লেবেল ছিল এই এলাকায় নতুন। এই এলাকায় আগে কখনও সে আসেনি। সে জন্য আগে থেকে ফাঁকা থাকা গ্রাম দেখে সে মনগড়া কল্পকাহিনী দাড় করিয়েছে। এই ঘটনাটি যায়ই হোক না কেন এটি কানাডার ইতিহাসে অন্যতম বড় রহস্য হয়ে আছে এখনও। কোথায় গিয়েছে সেই গ্রামবাসীরা বা কি ঘঠেছিল তাদের ভাগ্যে এই প্রশ্নটি অজানা রয়ে গেছে সবার কাছে।
উৎসঃ
১. https://unsolvedmysteries.fandom.com/wiki/Lake_Anjikuni_Village
২. https://skeptoid.com/episodes/4371
৩. https://mysteriousfacts.com/the-story-behind-disappearance-of-people-from-anjikuni-village/
৪. http://anomalyinfo.com/Stories/1930-november-lake-anjikuni-disappearances
৫. https://allthatsinteresting.com/the-mysterious-disappearance-of-the-anjikuni-people
0 Comments
Post a Comment