২০১৫ সাল! বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনাল!মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়া দল ৯৭ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে। ২০২০ সালে ক্রিকেটের নব্য দর্শক হয়তো এ ম্যাচের মহিমা কখনোই বুঝতে পারবে না। হয়তো অন্য কয়েকটা সাধারন ম্যাচের মতো স্মৃতির ক্যানভাস থেকে মুছে যাবে । এ লেখা তোমাদের জন্য।
উড়তে থাকা রিয়াজ |
মার্চের ২০ তারিখে অ্যাডিলেডের রৌদ্রজ্জ্বল মধ্য দুপুরে তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া। টসে জিতে পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। জোশ হ্যাজেলউডের পেস তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাই পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ।
এই মুহূর্তে ইংরেজ লেখক নেভিল কার্ডাস কেনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। তিনি স্কোরকার্ডকে বলেছেন ,‘আস্ত একটা গাধা’। কেনো বলেছেন সেটার জন্য বোধহয়, এই কোয়ার্টার ফাইনাল ও একটা উদাহরণ বনে যেতে পারে।
পাকিস্তান দল যখন বোলিংয়ে নামলো, তখন লড়াই কেন যেনো অস্ট্রেলিয়ার সাথে ওয়াহাব রিয়াজের একারই মনে হলো। তার কারণ একটাই অন্য প্রান্তের বোলাররা প্রাণ খুলে রান বিলানোর সাথেসাথে ক্যাচ ফেলার মহড়া দিতে থাকলেন। অথচ স্কোরকার্ডের দিকে তাকালে দেখা যাবে ৯ ওভারে ৫৪ রান দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট। একেবারে সাদামাটা বোলিং। সাথেসাথে আপনি স্কোরকার্ড দেখে বোকা বনে যেতে পারেন।
গতি-প্রমত্ততা-আতঙ্ক! কি ছিলো না প্রথম ছয় ওভারের স্পেলে। যেকোন বিচারে তা বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা স্পেলগুলোর একটি।হয়তোবা শুধুমাত্র বিশ্বকাপেরই নয় , ওহাব রিয়াজের এ স্পেল পুরো ক্রিকেট ইতাহাসেরই সেরা।তাই শেন ওয়ার্ন কোন ঝামেলায় না গিয়েই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, এটি তাঁর জীবনে দেখা সেরা বোলিং স্পেলের একটি।
অগ্নি ঝরা বাউন্সার |
প্রথম ওভারে এসেই ওয়ার্নারকে তুলে নিয়েছিলেন রিয়াজ। মাইকেল ক্লার্ক যখন আসলেন বাউন্সারেই টালমাটাল অবস্থা। ক্লার্ক ক্যাচ তুলে দিলেন শর্ট লেগের হাতে। পাকিস্তানের ইনিংস শেষে অনেকেরই ধারনা ছিল উইকেট বিচারে ৫০-৬০ রান কম হয়ে গেছে । অথচ ৫৯ রানের মাথায় যখন ৩ উইকেট নেই তখন ২১৩ রানকেই মনে হচ্ছে মাউন্ট এভারেস্ট! শেন ওয়াটসন আসামাত্র ওয়াহাব রিয়াজ শুরু করলেন নাস্তানাবুদ খেলা, তাতে তার কাছ থেকে কিছু আশা করা অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য মস্ত বড় দুরাশাই বটে। সেটি দুরাশা হয়েই থাকত, যদি ফাইন লেগে রাহাত আলী ওয়াটসনের দেওয়া সহজ ক্যাচটা অবিশ্বাস্যভাবে ফেলে না দিতেন! ওয়াটসন ফিরতো ৪ রানেই, অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাড়াতো ৪ উইকেটে ৮৩।
রিয়াজ বনাম ওয়াটসন |
রিয়াজ ওয়াটসনকে কতটা ভুগিয়েছে সেটা দেখতে হলেও আপনাকে একবার ইউটিউবে ঢু মারতে হবে।রিয়াজের করা প্রথম স্পেলে ৬ ওভারে ২৪ রানে ২ উইকেট কোথাও যেমন লেখা থাকবে না। আবার তেমন করেই লেখা থাকবে না , ওয়াহাবের করা মাত্র ৪ টি ডেলিভারি খেকে রান নিতে পেরেছিলেন ওয়াটসন । তার মধ্যে একবার তো ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে শর্ট থার্ডম্যানের দিকে গেছে , আরেকবার পেরেছেন রাহাত আলী ক্যাচ ফেলে দেওয়ায়। বাউন্সার মেরে ওয়াহাব রিয়াজ কখনো ছুড়ে দেন 'ফ্লাইং কিস'', কখনো আবার তালি মেরে বুঝাতে চেয়েছেন "বেটার লাক নেক্সট টাইম"। কিন্তু ভাগ্যের লীলাখেলাতে টিকেই গেলেন ওয়াটসন।
স্মিথের বিদায়ের পর আসলেন ম্যাক্সওয়েল। ম্যাচ হেরে যাবেন ভেবেই মিসবাহ আরেকবার স্মরণাপন্ন হলেন দিনের সেরা অস্ত্র ওয়াহাবের কাছে। দ্বিতীয় বলে মারলেন বাউন্সার। নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে ম্যাক্সওয়েল ক্যাচ তুলে দিলেন । আবার ও ক্যাচ ফেলে দিলেন । এবার সোহেল খান।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক এসে ওহাব বন্দনায় মেতে উলেন । বেশ কয়েকবার তো বলেই বসলেন , ক্যাচটা নিতে পারলে কী হতো কে জানে! ওয়ানডেতে তাঁর দেখা অন্য যেকোনো সেরা বোলিংয়ের পাশে এটিও থাকবে বলে জানিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আজ খুব ভালো বুঝতে পেরেছি, অ্যাশেজে মিচেল জনসনকে খেলতে ব্যাটসম্যানদের কেমন লেগেছিল!’
কিন্তু দিনশেষে ৯৭ বল আর ৬ উইকেট হাতে রেখে অস্ট্রেলিয়ার জয় শুধুমাত্র স্কোরকার্ডকে গাধা করে তুলেছে।
0 Comments
Post a Comment