"Sunday is gloomy, my hours are slumberless, Dearest the shadows I live with are numberless, Little white flowers will never awaken you, Not where the black coach of sorrow has taken you."
একটি বিখ্যাত গানের কিছু লাইন, বুঝতে পারছি না গানটিকে বিখ্যাত বলব নাকি নাকি প্রানঘাতী বিশেষণ যোগ করবো! 'গ্লুমি সানডে' যে গান শোনার পরিনতি মৃত্যু! গান মানুষের বিনোদনের খোরাক। গান শুনতে ভালোবাসে না এমন মানুষ খুবই কম খুজে পাওয়া যাবে। মন ভালো থাকুক কিংবা খারাপ, সব কিছুর প্রভাব পড়ে থাকে গান শোনার উপর। কিন্তু গানই যদি হয় মৃত্যুর কারণ তাহলে তো সেই গান আসলেই অবাক করার মত বিষয়। হাঙ্গেরীয় পিয়ানোবাদক ও কম্পোজার রেজো সেরেস গানটি কম্পোজ করেন। গানটির কথা লিখেছিলেন লাজলো জাভোর ও তার সংস্করণে গানের শিরোনাম ছিল জুমোরো ভাসার্নাপ যার হাঙ্গেরীয় উচ্চারন, 'somoru' অর্থাৎ দুঃখের রবিবার। এই 'দুঃখের রবিবার' অনেকের জীবনে ডেকে এনেছে সমাধানহীন দুঃখ। যার পরিনতি হয়েছিল মৃত্যু। গ্লুমি সানডে নামক এ গানটির সাথে সারাবিশ্বে শতাধিক মানুষের আত্মহত্যার কথা জড়িয়ে আছে। এজন্য গানটিকে বলা হয় ‘হাঙ্গেরিয় আত্মহত্যার গান’।
গানটি রচনার পেছনের ইতিহাস
প্রেম এমনই একটি অনুভূতি যা একজন মানুষের সফলতা বা ব্যার্থতার বা নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই গানটির পেছনেও রয়েছে তেমন একটি গল্প। কোন এক অজানা কারণে প্রেমিকার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে হাঙ্গেরিয়ান কবি ল্যাজলো জাভিয়েরের। সেই দুঃখ নিয়ে এক বিষণ্ণ সন্ধ্যায় তিনি লিখে ফেললেন একটি কবিতা। গ্লুমি সানডে' নামে কবিতাটি পাঠালেন বন্ধু রেজসো সেরেসের কাছে। সেরেস মামলা মোকদ্দমায় হেরে এক বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। কবিতার কথাগুলো ব্যাপক প্রভাব ফেলে তার ওপর। এরপর তিনি গানটি আর একজনের কাছে পাঠান। এক দুই করে তিনজনের হাত ধরে সৃষ্টি হয় পৃথিবীর বিষণ্ণতম এই গানের। যে গান শুনে শতাধিক মানুষ বেছে নিয়েছিলেন আত্মহননের পথ। এমনকি গীতিকার ল্যাজলো জাভিয়েরের প্রাক্তন প্রেমিকাও গানটি শুনে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবনাবসান ঘটান। আত্মহত্যাকারীদের অনেকের হাতে, পকেটে পাওয়া গিয়েছিল গানের লিখিত কপিটি। একটা পর্যায়ে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আত্মহত্যার সংখ্যা। এক সময় হাঙ্গেরিয়ান সরকার গানটি নিষিদ্ধ করে দেয়। কিন্তু নিষিদ্ধ করার পরও গানটি মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেতেই থাকে। হতে থাকে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ। ১৯৩৫ সালে প্রথম রুশ ভাষায় এবং এর পরের বছরই ফরাসি ও জাপানি ভাষায় অনুদিত হয় গানটি।প্রতিকী আত্মহত্যা |
অবশ্য গানটি কে এবং কেন লিখেছিলেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। রেজো সেরেসকে যদিও গানটির রচয়িতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়, তা সত্ত্বেও গানটির পেছনের কাহিনী হিসেবে একাধিক মতভেদ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত মত অনুযায়ী, মামলা-মোকদ্দমার মধ্যে পড়ে একসময় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন সেরেস। তাকে স্বান্তনা দিতে ছোটবেলার বন্ধু লাজলো জাভোর একটি কবিতা লিখে পাঠান। সেই কবিতাটি সেরেসের অন্তর ছুঁয়ে যায়। তাই পিয়ানোর সাহায্যে সুর দিয়ে এটিকে গানে রুপান্তরিত করেন সেরেস। তবে এও শোনা যায় যে, 'গ্লুমি সানডে' সেরেসের হাত দিয়েই রচিত হয়। অন্য একটি ব্যাখ্যা থেকে জানা যায়, সেরেসের প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তিনি ভীষন বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। সেই বিষন্ন অবস্থায় তিনি সুর করে ফেলেন গ্লুমি সানডের মতো মন খারাপ করা গান। অনেকে অবশ্য বলেন, বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীর বর্ণনা এবং তার অন্তিম পরিণতি কী হতে পারে সেই চিন্তা-ভাবনারই প্রতিফলন এই গানটি। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইহুদিদের উপর নাৎসিদের অত্যাচার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। হাঙ্গেরিতেও চলছিল চরম অর্থনৈতিক মন্দা আর ফ্যাসিবাদ। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটছিল সেরেসের। সেরেস তার অন্তরের সমস্ত বেদনা একত্রিত করে ঢেলে দিয়েছিলেন এই গানটির প্রতিটি সুরে। আর সে কারণেই অচিরেই তার বিষণ্ণতা ছুঁয়ে গিয়েছিল গীতিকার লাজলো জাভোরকে।
রজেসা সেরেস |
রজেসা সেরেস এর মৃত্যুর ঘটনা
১৯৬৮ সালে গানটির স্রষ্টা রেজসো সেরেস নিজেই গানটি গাইতে গাইতে চারতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন। এ গানের রয়্যালটির অর্থ তুলতে হাঙ্গেরি ছেড়ে আমেরিকায় যেতে রাজি ছিলেন না বলে সেরেসকে বাঁচতে হয়েছে আর্থিক অনটনের মধ্যে। জীবনে কখনোই হাঙ্গেরি ছেড়ে যাবেন না, এই একগুয়েমিতে তিনি তাঁর নিজের শহর বুদাপেস্টে ‘কিস্পিপা’ নামক একটা রেস্টুরেন্টে পিয়ানো বাজিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জায়গাটি ছিল মিউজিশিয়ান, ভবঘুরে এবং ইহুদি শ্রমজীবী মানুষের আড্ডাখানা। এ গানের মতো আরেকটা গান লেখা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়, তিনি আর নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারছেন না এইসব কারণে একসময় তাঁর মধ্যে প্রবল নৈরাশ্য বাসা বাঁধে। এরই মধ্যে হঠাৎ তার মায়ের মৃত্যু হয়। মায়ের মৃত্যুর পর সে এতটাই হতাশ হয়ে ওঠে যে তিনি একটা ভবনের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। তাঁকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি সেখানে গলায় তার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।হাঙ্গেরীয় কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত জনসম্মুক্ষে গানটির প্রচার নিষিদ্ধ করে। বর্তমানে গানটির যে সংস্করণ সর্বত্র শোনা যায় তা ১৯৪১ সালে বিলি হলিডে রেকর্ড করেন। ৪০ এর দশকে বিবিসিও গানটির লিরিক শোনানো বন্ধ করে শুধুমাত্র ইন্সট্রুমেন্টাল বাজানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ২০০২ সালে এসে গানটির উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে রেডিও চ্যানেলগুলো। গ্লুমি সানডে’ গানটিতে একটি বিশেষ জায়গা আছে যেটা বেশ প্রচলিত "প্রত্যেকটি মানুষেরই নিজের একটা সম্মান আছে। আমরা আহত হই। আমরা অপমানিত হই। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সম্মানের একটু হলেও অবশিষ্ট থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সবকিছু সহ্য করতে পারি। কিন্তু যখন সম্মানের শেষটুকুও ফুরিয়ে যায়, তখন বোধহয় এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়াই ভাল। চলে যাবো, তবু সম্মান নিয়েই যাবো"।
0 Comments
Post a Comment