প্রকৃতির ধর্মই হচ্ছে রহস্য সৃষ্টি করা। বিজ্ঞান প্রযুক্তির কল্যাণে এমন অনেক রহস্যের দ্বার জনসম্মুখে উন্মোচিত হলেও কিছু রহস্যের আজ অব্দি কোন সমাধান পাওয়া যায়নি। প্রেম ভালোবাসার কথা উঠলেই প্রেমিক প্রেমিকারা আগে উদাহরন টানে তাজমহলের। টানারই কথা। কারণ ইতিহাস কাঁপিয়ে দেওয়া প্রেম কাহিনী অনেক আছে। কিন্তু এমন প্রেম কাহিনী খুব কমই আছে যার সাক্ষী এখনো পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অমর সৃষ্টি তাজমহলের কথা যদি ধরা হয়, তাহলে এমন নিদর্শন পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই তাজমহল কে ঘিরে ভালোবাসা, ঘৃণা, বাস্তবতা, কল্পনা, বৈচিত্র, রহস্য  ইত্যাদি  গল্প-কাহীনির যেন শেষ নেই। 
পৃথিবীতে ভালোবাসার অনন্য নিদর্শন হিসেবে প্রায় চারশ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রা’র ঐতিহাসিক তাজমহল। এর সৌন্দর্যে আজো সারা বিশ্বের প্রেমিকের চোখ তৃপ্ত হয়। এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ও বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের স্মৃতিতে এই স্মৃতিস্তম্ভটি তৈরি করেছিলেন। ইন্দো-পারসিক শিল্প ধারার শ্রেষ্ঠ ফসল তাজমহল।


এর প্রকৃত নকশাটি করেন পারস্যের শিরাজবাসী ওস্তাদ ইসা। শিল্পী ইসা ছিলেন তাজমহল নির্মাণের প্রধান স্থপতি। স্পেনদেশীয় পর্যটক ফাদার সেবাস্টিয়ান মানরিখের মতে, তাজমহলের নকশা তৈরি করেছেন জনৈক ভেনিশিয় স্থপতি জেরোনিমো ভেরেনিও। একটা কথা বলে রাখি, তাজমহল নির্মাণের এই বিশাল কর্মযজ্ঞের অনেক বিষয় নিয়েই ঐতিহাসিকদের নানা মত আছে, মতভেদও আছে নানা গ্রন্থে। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন তাজমহলে। কিন্তু জানেন কি এত পর্যটকের ভিড় সত্ত্বেও আজও তাজমহলের একটি ঘর গোপনই রয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত কেউই সেই ঘরে ঢুকতে পারেন নি। 
শ্বেত পাথরের তৈরি এই সৌধটির প্রধান আকর্ষনের কেন্দ্রে রয়েছে সৌধটির সামনের জলাধার। এছাড়াও বাগান তো রয়েইছে। শাহজাহান ও মুমতাজের প্রেমকাহিনী লুকিয়ে আছে এই তাজমহলেই। তাজমহলের ভিতরে এমন কতগুলি ঘর রয়েছে যেখানে সাধারন মানুষের প্রবেশ নিষেধ। তবে সবার মনেই প্রশ্ন জাগে কেন সেখানে সাধারন মানুষের প্রবেশ নিষেধ,,,কিই বা আছে সেখানে? যদিও অনেক গুজবও রটেছে এই বিষয় নিয়ে। তারপরও আসল রহস্য এখনো অজানাই রয়ে গেছে। 


তাজমহলের অসংখ্য গুপ্ত কক্ষের রহস্য: 

১৪তম সন্তানের জন্মের সময় মমতাজের মৃত্যু হয়েছিল। তারপরই ১৬৩১ সালে শাহজাহান স্ত্রী মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশে তাজমহল বানাতে শুরু করেন। ২২ বছর লেগেছিল তাজমহল বানাতে। মনে করা হয়, তাজমহলে হাজারের বেশি গোপন ঘর রয়েছে। তার বেশিরভাগই আজ পর্যন্ত কেউ খুলতে পারেননি। এই গোপন দরজার ওপারে কী রয়েছে তা রহস্যই থেকে গেছে।
তাজমহলের ভেতর অসংখ্য গুপ্ত কক্ষ রয়েছে। শাহজাহানের সময় থেকেই এই কক্ষগুলো তৈরি করা হয়েছিল এবং বর্তমান ব্যবস্থাতেও এই কক্ষগুলোতে খুব বেশি পরিবর্তন করা হয় নি। অনেকে ধারণা করেন, তাজমহলের ভেতরে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সম্রাট শাহজাহান। কারণ, শ্বেতপাথরের নিচেই একটি লাল পাথরের তৈরি সিঁড়ি চলে গিয়েছে এবং নদীমুখ করে থাকা ২২টি ঘরের মাঝে একটি ঘর রয়েছে যেটিকে মন্দিরের প্রবেশকক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সম্রাট শাহজাহান বেশ কঠিনভাবেই এই ঘরের মুখ পাথরের সাহায্যে সিলগালা করে দিয়েছিলেন।


মুঘল অন্য কোন নিদর্শনের মাঝে এমন কোন স্থাপনা পাওয়া যায় না, যেখানে এমন চাতুরীর আশ্রয় নেয়া হয়েছিল। তবে এটি নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। 
শ্বেতপাথরের নিচে থাকা লাল পাথরের নিচে যে গোপন সিঁড়িটি গিয়েছে, তার করিডরটি প্রায় ১২ফিট প্রশস্ত ও ৩০০ ফিট লম্বা। এর চারপাশে আমরা যে মোটা থামগুলো দেখতে পাই, এই থামগুলো তৈরি করা হয়েছে বৈদিক নকশার সাহায্যে। এই করিডরটিকে গ্রাস করেছে নিকষ কালো আঁধার কারণ, শাহজাহান এর চারপাশে থাকা ভেন্টিলেটরগুলোকেও সিল করে দিয়েছেন যাতে কোনো আলো বাতাস এর ভেতর আসতে না পারে।।
এই ঘরগুলো আবিষ্কারের পরই লোকের মুখে মুখে বিভিন্ন জনশ্রুতি ছড়িয়ে পড়ে। তাজমহলের দর্শনার্থীরা এই ঘরগুলো সম্পর্কে খুবই উৎসাহিত হয়ে পড়ে এবং তারা এই ঘরগুলোকে খুঁজে দেখবার চেষ্টা করে এবং নিজেদের মতো করে গুজব ছড়াতে থাকে।