ভিনি, ভিডি, ভিসি! অর্থ না জানলে মনের মাঝে প্রশ্ন চলে এসেছে, এর মানে কি। অর্থ - এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। ইতিহাস পড়ুয়াদের ঠোঁটের আগাই থাকবে জুলিয়াস সিজরের নাম! বাংলাদেশ ক্রিকেটের জুলিয়াস সিজর তাহলে কে? অনেক সময় ধরে চিন্তা-ভাবনা করা লাগবে না নিশ্চয়। সোহাগ গাজীর নামটাও ঠোঁটের আগাই থাকার কথা ক্রিকেট প্রেমীদের। তার আগমনী বার্তা সকলের মাঝে নতুন সাকিব খুঁজে পাওয়ার স্বপ্ন তৈরী করেছিলো। অথচ বছর তিনেকের মধ্যে শেষ হয়ে গেলো তার অমিত সম্ভাবনাময় এক ক্যারিয়ার।


১ . গাজীর ঘূর্ণিতে পরাস্ত গেইল!


২০১৩ সালে পাঁচটি ওয়ানডে ও দুটি টেস্ট ম্যাচে খেলতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওই সফরে ক্যারিবীয় দলের সঙ্গে ছিলেন মারকুটে ক্রিস গেইলও।সিরিজে অভিষিক্ত হন সোহাগ গাজী  নামের এক আনকোরা  অফ স্পিনারের। সেই সিরিজে আনকোরা ছেলেটির সাথে জমে ওঠে ইউনিভার্স বস খ্যাত ক্রিস গেইলের লড়াই।

সিরিজ জুড়ে  ‘গাজী ঘূর্ণি’ তে নাস্তানাবুদ হয়েছিলেন গেইল। পুরো সিরিজে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি ইউনিভার্স বস।

ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত ২৪ রানে সোহাগ  গাজীর বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন গেইল। এরপর খুলনা টেস্টে প্রথম ইনিংসে আবারও ব্যক্তিগত ২৫ রানেই শেষ গেইল চ্যাপ্টার।বোলার সেই গাজী। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য ২০ রানে অপরাজিত থেকে দলকে ১০ উইকেটের বড় জয় এনে দিয়েছিল। টেস্ট শেষে ওয়ানডে সিরিজ। প্রথম ওয়ানডেতেই অভিষিক্ত হন সোহাগ গাজী। স্পিনে পরাস্ত হয়ে ব্যক্তিগত ৩৫ রানেই ড্রেসিংরুমে ফিরলেন গেইল।



২ .  একই টেস্টে সেঞ্চুরি  ও হ্যাট্রিকসহ ৬ উইকেট!


১৩৯ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এক ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকের ঘটনা একটিই। সেই সাথে আবার ইনিংসে ৫ উইকেট প্রাপ্তি তো সোনাই সোহাগা। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে  প্রথম ইনিংসে আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেন ১০১ রানের ঝকঝকে ইনিংস। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে আরো উজ্জ্বল ছিলেন।

নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের ৮৫তম ওভার। বোলিং এন্ডে দেখা গেলো সোহাগ গাজীকে । বল হাতে সেই ওভারের দ্বিতীয় বলে কোরি অ্যান্ডারসনকে ফেললেন এলবিডব্লুর ফাঁদে। পরের বলে ওয়াটলিং ক্যাচ দিলেন মুশফিকুর রহিমকে। বলটা বুকে লাগার পর দু-তিনবারের চেষ্টায় ধরেন বাংলাদেশ দলের উইকেটকিপার।তবে আঘাতপ্রাপ্ত হন মুশফিক। মুশফিকের বুকের পরিচর্যায় খেলা গেলো বন্ধ হয়ে। কিছুক্ষণ পর খেলা শুরু হলে প্রথম বলেই ডগ ব্রেসওয়েল ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। মুশফিকের প্যাড ছুঁয়ে সেটি শূন্যে ভেসে ওঠে, লেগ স্লিপ থেকে দৌড়ে সাকিব আল হাসান মুঠোয় পুরে নেন বলটা । সাথেসাথেই সোহাগ গাজীর হ্যাটট্রিক! ২০১৩ সালের অক্টোবরে কিউইদের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেটে ইতিহাসের পাতায় উঠে যায় বাংলাদেশের এই অফ স্পিনারের নাম।



৩ . প্রশ্নবিদ্ধ অ্যাকশন ও নিষ্প্রভ  সোহাগ


২০১৪ সালে বাংলাদেশ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাই । সেই সফরে ওয়ানডে সিরিজ চলার সময় সোহাগ গাজীর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন আইসিসির কর্মকর্তারা। সে যাত্রাতে পরীক্ষা দিয়ে উৎরাতে পারেননি।খেলতে পারেননি বিশ্বকাপ-১৫ । পরে অবশ্য অ্যাকশন শুধরে ফিরেছিলেন । ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে টি-টুয়েন্টি সিরিজে অ্যাকশন শুধরে খেলেন নিজের প্রথম ম্যাচ । কিন্তু নিজেকে আর স্বরুপে ফিরে পাননি। দুই ওভার বল ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ১৬ রান, ছিলেন উইকেট শূন্য । ব্যাট হাতেও তেমন কিছুই করতে পারেননি ।

সেই সিরিজের পর থেকে জাতীয় দলে ব্রাত্য সোহাগ গাজী।  বিপিএলের আসরগুলোতেও তেমন করে দেখা মেলেনা সোহাগের। দল পেলেও ম্যাচ মেলেনা বেশীর ভাগ সময় । মাশরাফী তো আফসোসের সুরে একবার বলেই বসলেন , ' সোহাগ গাজীর মতো ক্রিকেটার সারা বিশ্ব খুঁজে বেড়ায়। আর আমরা তাকে পেয়েও হারালাম , এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে।'


সোহাগ গাজী বাংলাদেশ ক্রিকেটে এসেছিলেন নক্ষত্রের মতো। এসেছিলেন নক্ষত্রের আলোয় দেশের ক্রিকেটকে আলোকিত করতে । বিসিবির সঠিক পরিচর্যার অভাবে হারিয়ে যাই সে নক্ষত্র । যে নক্ষত্রের গল্প শুনিয়ে মা তার সন্তানকে ঘুম পাড়ান , সে নক্ষত্র আর হয়ে ওঠা হয়নি । তিনি হয়ে রইলেন এক আক্ষেপের স্বর! হয়ে রইলেন হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্র।


তবে একটা প্রশ্ন  রয়েই যাই , যথার্থ  সুযোগ কি আদৌ পেয়েছিলেন! খেলছিলেনতো মাত্র একটা টি-টুয়েন্টি।